ইরান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা

ইরানের বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2018, 07:16 AM
Updated : 6 Jan 2018, 07:16 AM

একটি দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ জড়িয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ এ পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও মন্তব্য তাদের।

সপ্তাহখানেক ধরে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এ জরুরি বৈঠক হয়; এতে রাশিয়া ছাড়াও পরিষদের স্থায়ী সদস্য ফ্রান্স ও চীন ইরান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের তীব্র বিরোধীতা করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

গত ২৮ ডিসেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে অথনৈতিক দুরবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা। পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ইরানের বিক্ষোভকে ‘সাহসী জনগণের শক্তিশালী প্রদর্শনী’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেন।

প্রতিক্রিয়ায় ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, স্থায়ী সদস্য হিসেবে পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

“ইরানের এই বিক্ষোভ যে বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে তার শক্ত প্রমাণ আছে আমাদের সরকারের হাতে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, কিছু সদস্যের আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের অপব্যবহারে নিজেকে এমন একটি বিষয়ে সমর্পিত করলো পরিষদ, যা তার ক্ষমতার বাইরে,” বলেন জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত গোলামআলি খোশরু।

বুধবার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জাফারি বিক্ষোভের নামে দেশের বিভিন্ন শহরে হওয়া ‘বিদ্রোহ পরাজিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফ্রান্স জানায়, ইরানের বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ পাল্টা ফল বয়ে আনতে পারে। ইরানের চলমান বিক্ষোভ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয় বলেও মন্তব্য করেন জাতিসংঘে ফরাসী রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্কো দেলাত্রে।

ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মহলকে সচেষ্ট হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির সমালোচনা করে আসছেন। তেহরান চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে, গত বছরের অক্টোবরে এমন প্রত্যয়ন দিতেও অস্বীকৃতি জানায় তার প্রশাসন।

ইরানের এ বিক্ষোভকে দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করে চীন বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা সঙ্কট সমাধানে সহযোগিতা করবে না।

হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, “ইরানের সেই মানুষগুলোর পাশে ওয়াশিংটন দ্বিধাহীনভাবে আছে যারা স্বাধীনতা চায়, পরিবারের সমৃদ্ধি চায় এবং জাতির জন্য মর্যাদা চায়।”

এই অবস্থানের সমালোচনা করে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি মানলে ২০১৪ সালের অগাস্টে মিসৌরির ফার্গুসনে হওয়া কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিবাদের সময়ও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়া উচিত ছিল। 

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহতের ওই ঘটনায় পরে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছিল।