ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বেশ কয়েকটি শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2017, 05:13 AM
Updated : 30 Dec 2017, 06:27 AM

বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের কেরমানশাহ, রাশত, ইস্পাহান এবং কোমা শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কয়েক হাজার লোক যোগ দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল শহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হয়, পরে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে। 

উচ্চ দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষুব্ধ লোকজন মাশহাদের রাস্তায় নেমে এসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। তারা প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। বিক্ষোভ চলাকালে ‘কটু শ্লোগান’ দেওয়ায় ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে রাজবন্দিদের মুক্তি ও পুলিশি নির্যাতন বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে। প্রথমদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা মোল্লাতন্ত্র ও সরকারি নীতিবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। 

কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শুক্রবার ইরানের বড় বড় শহরগুলোতে আন্দোলন বিস্তৃত হয়।

শুক্রবার রাজধানী তেহরানেও বিক্ষোভ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ফুটেজে বিক্ষোভ ঘিরে প্রচুর পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সরকারবিরোধী বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে রাজধানীর সিটি স্কয়ারে জড়ো হওয়া অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কথা ইরানের লেবার নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন তেহরানের নিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি গভর্নর জেনারেল ।

বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা ‘ইরানের জনগণ এবং তাদের মৌলিক অধিকারের দাবি ও দুর্নীতি বন্ধে সমর্থন দিতে সব দেশের’ প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

২০০৯ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের পর হওয়া বিক্ষোভের পর এবারের বিক্ষোভকেই জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন পর্যবেক্ষকরা। 

বিক্ষোভের শুরুর দিকে অর্থনৈতিক অবস্থা ও দুর্নীতি আন্দোলনকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকলেও পরে তা রাজনৈতিক দিকে মোড় নেয়। দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্য আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন, অন্যদিকে অবৈধ সমাবেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

কেবল প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিই নন, আন্দোলনকারীদের স্লোগানের তীর বিস্তৃত হয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি ও মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধেও। বিক্ষোভ হয়েছে ধর্মীয় নেতাদের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত কোম শহরেও।

বিক্ষোভকারীদের ‘জনগণ ভিক্ষা করছে, মোল্লারা ঈশ্বরের মতো আচরণ করছে’ জাতীয় স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

অনেক বিক্ষোভকারী বহির্বিশ্বে ইরানের হস্তক্ষেপের বিষয়েও ক্ষোভ জানিয়েছে। মাশহাদ শহরে অনেককে ‘গাজা নয়, লেবানন নয়, আমার জীবন ইরানের জন্য’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ইরানের বর্তমান প্রশাসন অভ্যন্তরীণ বিষয়ের চেয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ে বেশি মনোযোগী বলেও অভিযোগ তাদের।

অনলাইনে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের ‘সিরিয়া ছাড়, আমাদের নিয়ে ভাবো’ বলতে শোনা গেছে।

ইরানের প্রভাবশালী ও এলিট নিরাপত্তা বাহিনী রেভ্যুলেশনারি গার্ডের ঘনিষ্ঠ ফারস নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ অর্থনৈতিক অসন্তোষ পেরিয়ে রাজনৈতিক দিকে মোড় নেওয়ার পর অনেককেই বিক্ষোভস্থল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।

কেরমানশাহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসকারী বিক্ষোভকারীদের’ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে বলে ফারসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

‘প্রতিবিপ্লবী শক্তি’ বিক্ষোভের আয়োজন করছে বলে মন্তব্য করেছেন মাশহাদ শহরের কর্মকর্তারা। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শহরটির বিক্ষোভকারীদের দমাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে জলকামান ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

তেহরানের গভর্নর জেনারেল বলেছেন, সরকারবিরোধী যে কোনো সমাবেশের চেষ্টা যথাযথভাবে মোকাবেলা করবে পুলিশ; শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।