ফুজিমোরিকে ক্ষমা: পেরুতে ফের বিক্ষোভ-সংঘর্ষ

পেরুতে কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরির সাজা মওকুফ করে তাকে ক্ষমা ঘোষণার পর দেশটিতে ফের বিক্ষোভ -সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2017, 11:05 AM
Updated : 26 Dec 2017, 11:05 AM

বড়দিনের আগের রাতে পেরু বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠার পর সোমবার রাজধানী লিমায় ফের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ‘ক্ষমা নয়’ স্লোগান তোলা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।

পেরুর বর্তমান প্রেসিডেন্ট পাবলো কুকজিনস্কি বড়দিনের আগে কারাবন্দি ফুজিমোরিকে ক্ষমা ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় হাজারো মানুষ।  

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ড ভোগ করা ফুজিমোরিকে রোববার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রেসিডেন্ট উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যায় ভুগছেন।

কারাগারের পরিবেশ তার স্বাস্থ্য এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিকিৎসকদের এক বিবৃতির পরপরই মানবিক কারণে ফুজিমোরিকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত জানান প্রেসিডেন্ট।

“মানবিক কারণে আলবার্তো ফুজিমোরিকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছে। আরও ৭ জনকেও একই কারণে ক্ষমা করা হচ্ছে,” বলে জানায় কুকজিনস্কির দপ্তর। ওই সাত জনের নাম জানানো হয়নি।

সোমবার টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে ফুজিমোরির ছেলে তার বাবার ক্ষমা পাওয়ার খবর জানানোর পরপরই লিমায় বিক্ষোভ-সংঘর্ষ  ছড়িয়ে পড়ে।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করেন তার দলের দুই সদস্যও।  অন্যদিকে, ফুজিমোরির ক্ষমার খবরে তার সমর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।

১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পেরুর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফুজিমরি। ২০০৭ সালে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তিনি প্রথম দোষীসাব্যস্ত হন, সেবার ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল তার।

দুই বছর পর ২০০৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আরও ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয় ফুজিমোরির।

গত রোববার তাকে ক্ষমা ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভকারীরা তার আমলে হত্যার শিকার হওয়া বিদ্রোহীদের ছবি নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়।

এক বিক্ষোভকারীর উক্তি, “অবৈধ উপায়ে এই ক্ষমার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। যে মেডিকেল রিপোর্টের আলোকে এই ক্ষমা করা হয়েছে তাও বোধকরি জাল। বাস্তবতা হচ্ছে, ফুজিমোরির সমর্থক ও বর্তমান সরকারের মধ্যে চুক্তিই দুঃখজনক এ ঘটনার কারণ।”

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট কুকজিনস্কি অভিশংসন এড়াতে ফুজিমোরিকে তার দলের সঙ্গে একটি চুক্তির আওতায় ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ক্ষমতা ধরে রাখার বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরিকে ক্ষমা করে দিতে চুক্তিবদ্ধ হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। কুকজিনস্কি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ফুজিমোরিকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ও।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক হোসে মিগুয়েল ভিভানকো টুইটারে বলেন, ““ফুজিমোরির এ মানবিক ক্ষমার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করছি। আইনের শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।”

ফুজিমোরির মুক্তি একটি অশ্লীল রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি, যার মাধ্যমে কুকজিনস্কি ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।

নানা প্রতিবাদ, নিন্দা সমালোচনার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট কুকজিনস্কি সোমবার এক ভাষণে একজন অসুস্থ মানুষকে তার ক্ষমা করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনগণকে তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।