শরণার্থী ইস্যু বদলে দিচ্ছে জার্মানিকে

জার্মানিতে শরণার্থীদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি ২০১৫ সালের পর থেকে আরও জটিল হয়ে পড়েছে৷ পপুলিস্ট রাজনীতিকদের উসকানির ফলে জনমানসেও শরণার্থীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে৷

>> ডয়চে ভেলে বাংলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2017, 11:00 AM
Updated : 20 Dec 2017, 11:01 AM

এমন বিশাল সংখ্যায় শরণার্থীদের ঢল সামলাতে প্রস্তুত ছিল না রাজনীতি জগত, কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ৷ সেই অভিজ্ঞতার রেষ আজও কাটেনি৷ জার্মানিতে শরণার্থীদের আশ্রয়ের সিদ্ধান্তের মূল্য আজও দিতে হচ্ছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে৷

২০১৫ সালে উন্মুক্ত সীমান্তে হাজার হাজার শরণার্থীদের থামানোর কোনো শান্তিপূর্ণ উপায় যে ছিল না, সেই যুক্তি অনেকেই মানতে নারাজ৷ পরিস্থিতি সামলে উঠে তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তি করিয়ে ম্যার্কেল জার্মানিতে আরও শরণার্থীর ঢল প্রায় বন্ধ করেও ‘প্রায়শ্চিত্ত' করতে পারেননি৷

শরণার্থী শিবিরগুলির উপর হামলা নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে৷ শরণার্থীবিরোধী বুলি আউড়িয়ে এএফডি-র মতো কট্টর-দক্ষিণপন্থি দল বিশাল নির্বাচনী সাফল্য পেয়েছে৷ অথচ ইউরোপের ভৌগোলিক কেন্দ্রের দেশ হিসেবে জার্মানিতে শরণার্থীদের এমন অস্বাভাবিক ঢল নামার ঘটনা সত্যি বিরল৷ স্থলপথে বা জলপথে ইউরোপে পা রাখার পর কয়েকটি দেশ পেরিয়ে জার্মানিতে পৌঁছানোর কথা৷

গ্রিক-মেসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয়- ছবি: রয়টার্স

ডাবলিন চুক্তি অনুযায়ী কোনো শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে দেশে প্রথম প্রবেশ করে, সে দেশেরই তার আশ্রয়ের আবেদন বিবেচনা করার কথা৷ অতএব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইটালি, গ্রিস বা স্পেনের মতো দেশ এতকাল সাধারণত সেই দায় বহন করে এসেছে৷

ইউরোপীয় সীমান্তরক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করে থাকে৷ জার্মানিতে এসে পড়ার পর শরণার্থীদের নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি৷ তার ভিত্তিতেই পরে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বিবেচনা করা হয়৷ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের গোটা দেশে যে কোনো অংশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে, যাতে কোনো একটি অঞ্চলের উপর বাড়তি চাপ না পড়ে৷

২০১৫ সালে বহু শহর ও গ্রামে স্কুল বা ক্রীড়াকেন্দ্রকেও জরুরি ভিত্তিতে শরণার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে হয়েছিল৷ আবেদন নাকচ হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হলে কোনো শরণার্থীর উপস্থিতি ‘বরদাস্ত' করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না৷ তখন তাদের মধ্যে অনেকে জার্মানির ফেডারেল কাঠামোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকে৷

২০১৬ সালে বার্লিনে সন্ত্রাসী হামলার পর শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে উঠেছে৷

তবে ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকট আবার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে একক নীতিমালা ও নিয়মকানুন ছাড়া এমন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা কঠিন৷ তাছাড়া বৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগও সংকটের মাত্রা কিছুটা কমাতে পারে৷ ইউরোপের সীমান্তে আফ্রিকা মহাদেশ বা তুরস্কের মতো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে স্বীকৃত শরণার্থীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিপজ্জনক নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে হবে না৷ আরও এক ধাপ এগিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে ইউরোপে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা দূর করার উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে৷

ইইউ দেশগুলি এই প্রশ্নে ঐকমত্য দেখাতে পারছে না৷ কাগজেকলমে বোঝাপড়া সত্ত্বেও বিশেষ করে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের কিছু দেশ শরণার্থী গ্রহণ করতেই প্রস্তুত নয়৷ ইউরোপীয় কমিশন এমনকি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছে৷ কিন্তু জনমানসে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণে বিষয়টি বেশ অপ্রিয় বটে৷