ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ছদ্মবেশে ইসরায়েলি কমান্ডো

মাথায় ফিলিস্তিনের পতাকা বেঁধে আরব বিক্ষোভকারীর ছদ্মবেশ নিয়ে ইসরায়েলি কমান্ডোরা বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের ভিড়ে ঢুকে ধর-পাকড়ের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের কৌশল নিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 06:21 PM
Updated : 14 Dec 2017, 06:28 PM

বুধবার ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত রামাল্লা শহরের নিকটবর্তী ইহুদি বসতি বেইত আল’র কাছে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের এই ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের রোষের মুখে পড়েন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী মোহামদ তোরোকমান।

প্রায় দুই দশক ধরে ওই এলাকায় সংঘর্ষের খবর সংগ্রহে নিয়োজিত তোরোকমান ওই পরিস্থিতিকে ‘ভয়ানক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তার দিকে বন্দুক তাক করা হয় জানিয়ে এই আলোকচিত্রী সাংবাদিক বলেন, “তারা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে আমাকে নিশানা করায় চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে বিক্ষোভ করছে ফিলিস্তিনিরা।

এদিনও বিক্ষোভে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ ফিলিস্তিনি। টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।

এই সমাবেশের মধ্যে বিক্ষোভকারীর ছদ্মবেশে থাকা ইসরায়েলি কমান্ডোরা হঠাৎ অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করেন।

তোরোমান বলেন, “ছদ্মবেশী সৈন্যরা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের চেহার নিয়ে পাথর নিক্ষেপকারীদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

“হঠাৎ তারা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ শুরু করেন, একই সময় ব্যবহার করা হয় সাউন্ড গ্রেনেড।”

গ্রেনেডের শব্দ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ছদ্মবেশধারী আটজন ইসরায়েলি সৈন্যকে দেখতে পান তোরোকমান।

অস্ত্র ব্যবহার করে তারা যখন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের পাকড়াও করেন, সেই সময়ের ছবি তুলতে গেলে পিস্তল তাক করানো হয় তোরোকমানের দিকে।

তিনি বলেন, “উনি আমার প্রতি চিল্লাচিল্লি করেন এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।

“নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি দ্রুত সেখান থেকে চলে আসি।”

এরপর ইসরায়েলি সৈন্যরা এগিয়ে এলে অন্য বিক্ষোভকারীরাও সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে নিরাপদ স্থানে গিয়ে ঘটনার ছবি তোলেন তোরোকমান।

মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনা ঘটে যায় বলে জানান তিনি।

মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র স্থান জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব চলছে যুগের পর যুগ। জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে ইসরায়েল।

অপরদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে চান দখলদার ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিরা।

১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম জেরুজালেম ইসরায়েলের দখলে গেলে আল-আকসা মসজিদসহ অনেকগুলো ধর্মীয় স্থাপনা সম্বলিত পূর্ব জেরুজালেম জর্ডানের দখলে থাকে।  

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল।

এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট চলছে, যা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা চালিয়ে আসছে।

এরমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ায় ওই শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্ক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও।

তার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোও নিন্দায় সরব হয়েছে। বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিশ্বের ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বিশেষ সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী স্বীকৃতি দিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।