আলাবামায় ‘ধাক্কা খেলেন’ ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে আলাবামা অঙ্গরাজ্যের আলোচিত সিনেট নির্বাচনে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডগ জোনস। এ জয়কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ‘ধাক্কা’ হিসাবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 09:08 AM
Updated : 14 Dec 2017, 01:11 PM

নির্বাচনে জোনস পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী রয় মুর পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট।

নির্বাচনের আগে থেকেই মুরের যৌন কেলেঙ্কারির কারণে ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোনস জিততে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। আর এখন তার ঐতিহাসিক জয় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের শঙ্কার কারণ হল বলেই মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প গোঁড়া থেকেই দলের কাউকে তোয়াক্কা না করে রয় মুরকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। নির্বাচনে তার পরাজয়ে সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমল।

এতে করে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনে এখন সিনেটে ডেমোক্র্যাটদেরই প্রভাব বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হল। যে কোনও আইন পাসে ট্রাম্পকে এখন আগের তুলনায় শক্ত বাধার মুখোমুখি হতে হবে।

রিপাবলিকানদের ঘাঁটি বলে পরিচিত আলাবামায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর জয়ে  উল্লাস করছে সমর্থকরা ।

গণমাধ্যমে জয়ের খবর আসার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ৬৩ বছর বয়সী সাবেক মার্কিন এটর্নি ডগ জোনস বলেন, “পুরো নির্বাচনী দৌড় ছিল আদতে ‘মর্যাদা ও সম্মানের প্রশ্নে। নির্বাচনী প্রচার ছিল আইনের শাসন নিয়ে, ছিল সাধারণ সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচার নিয়ে।”

চলতি বছরের শুরুতে জেফ সেশনস মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার ছেড়ে দেওয়া সিনেট আসনে এ বিশেষ নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে রিপাবলিকান মুরকে প্রত্যাখ্যান করে আলাবামার ভোটাররা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শক্ত বার্তা দিলেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

ভোটের এ ফল ক্ষমতাসীনদের জন্যও অশনিসঙ্কেত। আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হাতছাড়া হলে ট্রাম্পের জন্য দেশ চালানোও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

১৯৬৩ সালে বার্মিংহামে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় বোমা হামলা চালানো উগ্রবাদী সংগঠন কু ক্লাক্স ক্লানের দুই সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করায় কৃতিত্বের দাবিদার ডগ জোনস।

তিনি এর আগে কখনোই নির্বাচিত কোনো পদে ছিলেন না।

অন্যদিকে ‘মুসলমানরা কংগ্রেসের দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত নন’, ‘সমকামিতা যুক্তরাষ্ট্রে আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত’ এমন বিভিন্ন মন্তব্যের জন্য আগে থেকেই সমালোচিত ছিলেন রয় মুর। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার বিরুদ্ধে ওঠা যৌন অসদাচরণের অভিযোগের কারণে তিনি পিছিয়ে পড়েন।

মুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা বেশ কয়েকজন নারী জানান, কিশোরী বয়সেই তারা এ রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।

জাতীয় পর্যায়েও  আলোড়ন তোলা এসব অভিযোগের কারণে প্রভাবশালী অনেক রিপাবলিকানও মুরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন, যদিও ট্রাম্পের সমর্থনে শেষ পর্যন্ত লড়ে যান আলাবামার সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এ বিচারপতি।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আলাবামা সিনেট নির্বাচনের ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে জোনসের এগিয়ে থাকার চিত্র স্পষ্ট বলে জানায় মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। যদিও মুর বলছেন, গণনা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে পরাজয় মেনে নেবেন না তিনি।

৭০ বছর বয়সী রিপাবলিকান এ প্রার্থীর ধারণা, নষ্ট হওয়া ভোটের পরিমাণ দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানের চেয়ে বেশি হতে পারে। আর তা হলে ভোট পুনর্গণনা করার নিয়ম আছে।

আলাবামার সেক্রেটারি অব স্টেট জন মেরিল বলেছেন, দুই প্রার্থীর ব্যবধান মোট ভোটের আধা শতাংশেরও কম হলে ভোট পুনর্গণনা হতে পারে। তবে এমন সম্ভাবনা নেই বলে সিএনএন কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মেরিল। আলাবামার জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওদিকে, মুর পরাজয় না মানলেও মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে ডেমোক্রেট প্রার্থীর জয়ের খবরে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

“দ্রুতই এই আসন ফিরিয়ে নেওয়ার নতুন সুযোগ পাবে রিপাবলিকানরা,” অপর এক টুইটে এমন আশাও প্রকাশ করেন তিনি।