আট দেশের আহ্বানে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে জরুরি ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানায় আল জাজিরা।
গত বুধবার এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সেইসঙ্গে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশও দেন।
তারপরই জেরুজালেম, গাজা, পশ্চিম তীর, রামাল্লাহ, হেব্রন, বেথেলহেম, নাবলুসসহ বহু জায়গায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের দল হামাস ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা (গণআন্দোলন) শুরুর ডাক দিয়ে শুক্রবার ‘ক্ষোভ দিবস’ ঘোষণা করে।
এদিন ইসরায়েলি সেনা ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে।
শুক্রবারের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক নিকোলাই ম্লাদেনভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের কারণে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার যে সম্ভাব্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে সেটা নিয়ে তিনি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
“ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাসে বিশ্ব এখন কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।”
তিনি বলেন, “যখন কোনো সংঘর্ষে দুইটি দল থাকে, তখন সেখানে কোনোভাবেই সমান সুযোগ পাওয়া বিষয়টির অস্তিত্ব থাকে না। সেখানে একদল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এবং অন্যদল শোষিত হয়।
“একদল অবৈধভাবে বসতি নির্মাণ করছে… একদল গাজা অবরোধ করে রেখেছে...এক দল অন্য দলের কাছ থেকে পানির উৎস ও চাষের জমি কেড়ে নিচ্ছে ….এক দল অন্য দলকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করছে। যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে বলিভিয়া।”
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়া ও সুইডেনের প্রতিনিধিরাও কড়া ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।
তেল আবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রায়ক্রফ্ট।
তিনি বলেন, “ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন স্টেট উভয়ই জেরুজালেমকে রাজধানী করতে চায় এবং আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই সেটা ভাগ হওয়া উচিত।”
ইসরায়েল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশের আহ্বানও জানান তিনি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে জটিলতা আরও বাড়াবে, যা ওই অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যদিও এসব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি উল্টো জাতিসংঘের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে বলেন, "বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি আনার পরিবর্তে বরং এ উদ্যোগের ক্ষতি করেছে।”
বৈঠকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন।