জেরুজালেম: ফিলিস্তিনিদের ‘ক্ষোভ দিবসে’সংঘর্ষে নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে ঘোষিত ‘ক্ষোভ দিবসে’ ইসরায়েলি সেনা ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 04:39 AM
Updated : 9 Dec 2017, 04:49 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার পশ্চিমতীর ও গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। 

শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওয়াশিংটন তার ‘গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। 

ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট অম্ব্যুলেন্স সার্ভিসের তথ্যনুযায়ী, পশ্চিমতীর ও গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলি ও রাবার বুলেটে ৮০ জনেও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। পাশাপাশি সেনাদের ছোড়া কাঁদুনে গ্যাসেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আরও ৩১ জন আহত হয়েছিলেন।

শুক্রবার জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই ফিলিস্তিনিরা দেয়ালঘেরা পুরনো জেরুজালেমের গেইটে গিয়ে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

এ সময় তারা শ্লোগান তোলে, ‘জেরুজালেম আমাদের, আমাদের রাজধানী জেরুজালেম’ এবং ‘ফাঁকা কথা চাই না, চাই পাথর, কালাশনিকভ’। পরে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

হেব্রন, বেথেলহেম, নাবলুসে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের ওপর পাথর ছুড়ে মারে, জবাবে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে ইসরায়েলি সেনারা। 

গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। দুই দিনের ‘ক্ষোভ দিবসে’ এটিই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। পরে আহত আরেকজন মারা যান বলে গাজা হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

টিভিতে প্রচারিত দৃশ্যে বেথলেহেমে পাথর ছুড়ে মারা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদেরকে জলকামান ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

সেনাদের কাঁদুনেগ্যাস আর বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিদের টায়ার পোড়ানোয় ঘন কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারিদিক। ইসরায়েলি সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেটও ছুড়ে।

অন্যান্য যেসব স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে সেসব জায়গাতেও দেখা গেছে একই দৃশ্য।

ফিলিস্তিনি নেতারা শুক্রবার ইন্তিফাদার ডাক দেওয়ার সহিংসতার আশঙ্কায় পশ্চিম তীর ও গাজা সীমান্তে আগে থেকেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিল ইসরায়েল।

জেরুজালেমে পুরনো শহরের বাইরে পুলিশ শত শত বিক্ষোভকারীকে হটিয়ে দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে সংঘর্ষে অন্তত ২১৭ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসাকর্মীরা।

রাত নেমে আসার পর অধিকাংশ এলাকায়ই বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে আসে। রাতে গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে রকেট হামলার সতর্কীকরণ সাইরেন বেজে ওঠে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা থেকে নিক্ষেপ করা দুটি রকেট প্রতিহত করার কথা জানিয়েছে।

রকেট হামলার জবাবে গাজায় ‘জঙ্গিদের লক্ষ্যস্থলগুলোতে’ বিমান হামলা চালানোর হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি ওই বিমান হামলায় ছয় ‍শিশুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।  

অপরদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা ‘জঙ্গিদের’ প্রশিক্ষণ শিবির ও অস্ত্র গুদামে হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমান হামলায় আহতদের অধিকাংশই ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের পাশের একটি ভবনের বাসিন্দা।

জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত ঘোষণায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার নীতির পরিবর্তনকে ইসরায়েল স্বাগত জানালেও আরব ও মুসলিম বিশ্ব নিন্দা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, “জেরুজালেম বিষয়ে মার্কিন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি আমরা। এই অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি উদ্যোগের মধ্যস্থতাকারীর যোগ্যতা হারিয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোও কয়েকদশকের নীতি বদলে দেওয়ার এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আরব অঞ্চলজুড়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। জর্ডান, মিশর, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিশিয়া এবং ইরানে ফিলিস্তিনপন্থি হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছে।

মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মত মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভমিছিল হয়েছে। জার্মানির বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র দূতবাসের সামনেও বিক্ষোভ করেছে কয়েকশ বিক্ষোভকারী।