ইউনেস্কোর তালিকায় ১৫ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

বিভিন্ন দেশের ১৫টি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইউনেস্কোর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিট্যাজ) স্বীকৃতি পেয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের শীতলপাটির বয়নশিল্পও রয়েছে।

উম্মে হাবিবাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2017, 01:43 PM
Updated : 6 Dec 2017, 02:31 PM

ইউনেস্কোর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটি বুধবার ২০১৭ সালের নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই তালিকা অনুমোদন করে।

প্রতিবছর ইউনেস্কোর এই কমিটির বৈঠকে অন্যতম আলোচ্যসূচি থাকে নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা অনুমোদন। এবার দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ওই কমিটির বৈঠক, চলবে শনিবার পর্যন্ত।

বাংলাদেশের শীতলপাটির বয়নশিল্পের সঙ্গে ১৯টি দেশের ১৫টি নৈর্ব্যক্তিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সদ্য অনুমোদিত তালিকায় স্থান পেয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি একাধিক দেশের সাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

দুটি শ্রেণিভুক্ত করে এই তালিকা তৈরি করেছে ইউনেস্কোর এই কমিটি। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলির সাধারণ একটি তালিকার সঙ্গে বিলুপ্তির হুমকির মুকে থাকা ঐতিহ্যগুলির আলাদা তালিকা রয়েছে।

হুমকির মুখে যেসব ঐতিহ্য

# এই তালিকার শুরুতে রয়েছে ‘আল আযি’ নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহ্যবাহী কাব্য। কারো মহিমা ও স্তুতি প্রকাশের জন্য বাদ্যযন্ত্র সাহায্য ছাড়া ছড়ার রূপে এসব কাব্য দলীয়ভাবে আবৃত্তি করা হয়। এধরণের ছড়ার গাঁথুনিতে প্রবাদ বাক্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়।

# ‘ইলানো’ নামে কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলায় প্রচলিত একধরণের কর্মোদ্দীপক সংগীত। গবাদি পশু দুধ সংগ্রহ করতে এবং তাদের চরানোর সময় একক বা দলগতভাবে এই সংগীত গাওয়া হয়ে থাকে।

# বতসোয়ানার কেগাতলেন অঞ্চলের লোকসংগীত ‘দিকোপেলো’ও জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায়। একসঙ্গে নেচে-গেয়ে একটি নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের মানুষ বাদ্যযন্ত্র ছাড়া এই সংগীত চর্চা করে।

# এই তালিকায় রয়েছে মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পবিত্র স্থানের বন্দনা’র উৎসব, অদৃশ্য শক্তি বা দেব-দেবীর পূজায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
# হুমকির মুখে থাকা এই তালিকায় জায়গা পেয়েছে মরক্কোর পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চ অ্যাটলাস পর্বতাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ‘তাসকিউইন’ নামে বিশেষ নৃত্য, যা বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। এর বিশেষ দিক হলো- নাচের পোশাকের সঙ্গে জমকালো শৃঙ্গা ব্যবহার করা হয়।

# এই তালিকায় রয়েছে তুরস্কের পাহাড়ি এলাকার মানুষের মধ্যে প্রচলিত একধরনের শিস। দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এই ‘হুইসেলড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার হয়।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাধারণ তালিকা

# ‘আল-ক্বাত আল-আসিরি’ নামে সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী দেওয়াল অলংকরণ, যেই সাজসজ্জার কাজ নারীরা ঘরের ভেতরে করে থাকেন।

# ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছ বুলগেরিয়া, মেসিডোনিয়ার সাবেক যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্র, মলদোভা প্রজাতন্ত্র ও রোমানিয়ার ‘বসন্তবরণ উৎসব’, যা ১ মার্চ সম্মিলিতভাবে পালন করা হয়। লাল-সাদা সুতামিশ্রিত ধাগা বা রিস্ট ব্যান্ড পরে এই উৎসবে অংশ নেয় মানুষ।

# আজারবাইজানের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘দোলমা’র প্রস্তুতপ্রণালীও এই বছর জায়গা পেয়েছে এই তালিকায়। এই প্রক্রিয়ায় তাজা বা অসেদ্ধ পাতায় মুড়িয়ে বা ফলমূল ও সবজির ভেতর মাংস, পেঁয়াজ, চাল, ডাল ও মরিচ ভরে এই খাবার তৈরি হয়।

# বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে আর্মেনিয়ার ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘কোচারি’। ছুটি, উৎসব উদযাপন, পারিবারিক অনুষ্ঠানসহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই নাচ পরিবেশিত হয়। সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে এই নাচের মধ্য দিয়ে যৌথ পরিচয়বোধ ও সংহতির যেমন প্রকাশ ঘটে, তেমনি এটা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও নৃগোষ্ঠিগত স্মারকও বটে।

# বসনিয়া ও হার্জেগোভনিয়ার কোনয়িক পৌর অঞ্চলের বিশেষ ধরণের কাঠ খোদাই শিল্পও এতে জায়গা পেয়েছে। হাতের সুদৃশ্য কারুকাজ ও দৃষ্টিনন্দন বৈশিষ্ট্যের এই কারুকাজ আসবাবপত্র, সূক্ষ্মগৃহসজ্জায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

# কিউবার চাষীদের গাওয়া ঐতিহ্যবাহী কাব্য ও সংগীত ‘পুনতো’ স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের। তাৎক্ষণিকভাবে রচিত বা আগে থেকে তৈরি অষ্টপদী দশ চরণের ছড়া সুরসহ গাওয়া হয়।

# ইউনেস্কোর নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় আরও জায়গা পেয়েছে বলিভিয়ার আলাসিতা মেলার সময় ‘লাপাজের পথে শাস্ত্রীয় যাত্রা’। ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরুর পর দুই বা তিন সপ্তাহ ধরে চলমান এই যাত্রায় শহরের উর্বরতার দেবতা হিসেবে পরিচিত ‘একেকোর’ সঙ্গে সম্পর্কিত ‘সৌভাগ্যের’ প্রতিকৃতি কিনে থাকে অংশগ্রহণকারীরা।  
# বাংলাদেশের শীতলপাটির বয়নশিল্পের পর তালিকায় রয়েছে আইভরি কোস্টের গুড়ো সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্যসংগীত ‘যাওলি’। নারী সৌন্দর্যের প্রতি শ্রদ্ধাসূচক সংগীত এই যাওলি ‘ব্লৌ’ ও ‘জেলা’ নামে দুটি মুখোশ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটার অন্য নাম জেলা লৌও যাওলি বা জেলার মেয়ে যাওলি।