মিশরে মসজিদে হামলা, নিহত বেড়ে ২৩৫

মিশরের উত্তরাঞ্চলীয় সিনাই প্রদেশে জুমার নামাজের সময় একটি মসজিদে বোমা ফাটিয়ে এবং গুলি চালিয়ে ২৩৫ জনকে হত্যা করেছে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা।

>>রয়টার্স
Published : 24 Nov 2017, 01:05 PM
Updated : 24 Nov 2017, 06:01 PM

বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার আল-আরিশ নগরীর কাছে বির-আল আবেদ শহরের আল রাওদাহ মসজিদে এ হামলায় আহত হয়েছে আরও শতাধিক মানুষ।

গোলযোগপূর্ণ সিনাইয়ে ২০১৩ সালে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট জিহাদি দলগুলোর উত্থানের পর থেকে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে মিশরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দুর্গম পথে চলতে সক্ষম- এমন চারটি বাহনে চড়ে হামলাকারীরা ওই মসজিদে আসে। জুমার নামাজ যখন শেষ হচ্ছে, তখন সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত মানুষ যখন পালানোর চেষ্টা করছিল, তখন তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় হামলাকারীরা।

ওই মসজিদের প্রবেশ পথ আটকে দেওয়ার জন্য বাইরে থাকা যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। প্রায় ৪০ জন অস্ত্রধারী এই হামলায় অংশ নেয় বলে তথ্য দিয়েছে রয়টার্স।

 

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ছবিতে মসজিদের মেঝেতে সারি সারি মৃতদেহ এবং রক্তমাখা জামাকাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আহতদের হাসপাতালে নিতে মসজিদের প্রবেশপথে দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সের সারি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, “মানুষ যখন ছুটে পালানোর চেষ্টা করছিল, তখন তাদের ওপরও গুলি চালাচ্ছিল ওরা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেও ওরা গুলি করেছে।”

 

মিশরের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ হামলার দায় এখন পর্যন্ত কোনো সংগঠন স্বীকার করেনি। কাদের নিশানা করে এ হামলা হতে পারে- সি বিষয়েও এসেছে বিভিন্ন রকম তথ্য।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, ওই মসজিদে সুফিবাদীরা নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন। আর আইএসসহ বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপ সুফিবাদীদের বিরুদ্ধে। হতাহতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর লোকজনও রয়েছে।

কায়রোতে বিবিসির প্রতিবেদক স্যালি নাবিল বলছেন, সিনাইয়ের উত্তরাংশে জঙ্গিরা এতদিন মূলত সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করেই বিভিন্ন হামলা চালিয়ে আসছিল। এই প্রথম সেখানে মুসলমানদের কোনো মসজিদ এভাবে হামলার শিকার হল। হতাহতের সংখ্যার দিক দিয়েও এ হামলা নজিরবিহীন।

 

গত কয়েক বছর ধরেই সিনাইয়ে এক ধরনের ‘মিডিয়া ব্ল্যাক আউট’ চলছে, এমনকি রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদমাধ্যমগুলোকেও সেখানে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

মিশরের সেনাবাহিনী প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের লড়াইয়ে হারিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু যে মাত্রায় সেখানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে, তাতে সেনা অভিযানের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

শুক্রবারের হামলার পর মিশরে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল-সিসি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এবং আরব লিগ প্রধান আহমেদ আবদুল গেইত এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবিসি লিখেছে, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সেনাবাহিনী ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই মিশরে জঙ্গি হামলার ঘটনা বেড়েছে। একের পর এক জঙ্গি হামলায় শত শত পুলিশ, সেনা সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছেন।

এসব ঘটনার অনেকগুলোর জন্যই আইএস-সংশ্লিষ্ট সিনাই প্রভিন্স জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হামলার লক্ষ্য ছিল মিশরের কপটিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্থাপনা। আবার ২০১৫ সালে রাশিয়ার একটি বিমান ধ্বংস করে ২২৪ জনকে হত্যার ঘটনাতেও আইএসপন্থি জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।