জিম্বাবুয়ের জনগণ কথা বলেছে: নানগাওয়া

প্রায় চার দশক ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা রবার্ট মুগাবেকে সরানোর মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ে গণতন্ত্রের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করলো বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2017, 07:26 AM
Updated : 23 Nov 2017, 07:27 AM

বুধবার রাজধানী হারারেতে উৎফুল্ল হাজারো জনতার সামনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। 

দু'সপ্তাহ আগে নিরাপত্তার অভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যাওয়া নানগাওয়া বুধবার জিম্বাবুয়ে ফেরেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

পরে হারারেতে জানু পিএফ পার্টি কার্যালয়ের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, “জনগণ কথা বলেছে, জনগণের কণ্ঠই ঈশ্বরের কণ্ঠ। আজ আমরা নতুন ও মুক্ত একটি গণতন্ত্র শুরুর সাক্ষী হলাম।”

বক্তব্যে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় থাকা জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে পালাবাদল আনারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

“আমাদের অর্থনীতিকে বিকশিত করতে হবে, আমরা দেশে শান্তি চাই, চাই চাকরি, চাকরি আর চাকরি।”

নানগাওয়াকেই একসময় মুগাবের উত্তরসূরি হিসাবে দেখা হতো। গত মাসে হঠাৎ করে সরকার ও দলীয় পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসতেই প্রেসিডেন্ট মুগাবে নানগাওয়ার মতো অভিজ্ঞ নেতাকে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ দ্বন্দ্বের মধ্যেই গত সপ্তাহে সামরিক বাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় ও মুগাবেকে গৃহবন্দি করে। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির পক্ষ থেকেও প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড চাপের মুখে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মুগাবে।

শুক্রবার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়ে নানগাওয়া আগামী বছরের নির্বাচন পর্যন্ত জানু-পিএফ পার্টিকে নেতৃত্ব দেবেন বলে দলটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

এর আগে মুগাবে তার পদত্যাগের ঘোষণায় বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন।

গত ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন মুগাবে।

১৯৮০ সালে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মুগাবে; যিনি আফ্রিকার জাতির পিতাদের একজন।

স্বাধীনতার একজন যোদ্ধা হিসাবে ক্ষমতায় এসে জিম্বাবুয়ের ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসাবে বীরোচিত সম্মান ও খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি।

তারপরও আফ্রিকায় অনেক মানুষের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে মুগাবে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি, গণতন্ত্র এবং বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। বিরোধীদের দমনে তিনি নৃশংসতার আশ্রয়ও নিয়েছেন।

সমালোচকরা বলে আসছেন, আধুনিক অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়টিই মুগাবে বোঝেন না। অর্থনীতির বিকাশ কিভাবে ঘটানো যাবে সে বিষয়টি তিনি কখনও গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি।

এখন ক্ষমতার পালাবদলে জিম্বাবুয়েতে সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে কিনা বা নানগাওয়া অর্থনীতির চাকা সত্যিই ঘোরাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও অনেক পর্যবেক্ষকের সংশয় আছে।