হারিরির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত

প্রেসিডেন্টের অনুরোধে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 02:11 PM
Updated : 22 Nov 2017, 05:14 PM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সৌদি আরব সফরে গিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার নিজ দেশে ফিরেছেন তিনি।

বুধবার এক বিবৃতিতে হারিরি বলেন, “আমি আজ প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের কাছে আমার পদত্যাগপত্র দিতে গিয়েছি। কিন্তু এটি জমা দেওয়ার আগে কি কারণে এবং কি ধরনের  রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেগুলো নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ করেছেন তিনি। আমি তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছি।”

এ পদক্ষেপে লেবাননের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক নিয়ে সংকট নিরসনে দায়িত্বশীল সংলাপের নতুন দ্বার খুলে যাবে বলে হারিরি আশা প্রকাশ করেন।

টেলিভিশনে হারিরির বিবৃতি সম্প্রচার করা হয়েছে। লেবাননের প্রতিটি নাগরিক অবশ্যই আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।

গত ৪ নভেম্বর রিয়াদ থেকে হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এতে সুন্নি বাদশাহ শাসিত সৌদি আরব ও ইসলামি বিপ্লবের দেশ শিয়া ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের আরেক মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হয় লেবানন, যে দেশটির সরকারের অংশ হিজবুল্লাহ ইরানের শক্তিশালী মিত্র।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা জানিয়ে এর জন্য ইরান ও হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছিলেন হারিরি। এ ঘোষণার পর থেকে সৌদি আরবে অবস্থান করায় ও প্রকাশ্যে না আসায় তাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়। তার ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকরা জানিয়েছিল, রিয়াদের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন এবং তাকে সৌদি আরবে আটকে রাখা হয়েছে।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনও অভিযোগ করেন, হারিরির ইচ্ছার বিরুদ্ধে সৌদি আরব তাকে আটকে রেখেছে।

ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে সৌদি আরব তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে এমন ইঙ্গিত অস্বীকার করেন সাদ। রিয়াদও তাকে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে।

এ পরিস্থিতিতে আউন ঘোষণা করেন, হারিরি ফিরে এসে স্বশরীরে পদত্যাগপত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত তিনি তা গ্রহণ করবেন না।

হারিরিকে নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার মুখে হস্তক্ষেপ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং বাড়তে থাকা উত্তেজনা হ্রাস করতে সফল হন। ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে হারিরি শনিবার সৌদি আরব থেকে প্যারিস যান।

প্যারিসে অবস্থানকালেই বুধবার লেবাননের স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশে ফেরার ঘোষণা দেন তিনি। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্ট আউনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিজের ‘অবস্থান পরিষ্কার করবেন’ বলে এ সময় জানিয়েছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তা সিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাদ হারিরি।

বৈরুত বিমানবন্দরে নামার কিছুক্ষণ পর লেবাননের জনগণের জন্য তার কোনো বার্তা আছে কি না জিজ্ঞেস করা হলে ‘ধন্যবাদ’ বলে উত্তর দেন তিনি। এরপর তিনি তার বাবা লেবাননের সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক আল হারিরির কবর জিয়ারত করতে যান। ২০০৫ সালে বৈরুতে এক বোমা হামলায় রফিক হারিরি নিহত হয়েছিলেন।

হারিরি পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সাদ আল-হারিরি একই সঙ্গে লেবানন ও সৌদি আরবের নাগরিক। সৌদি আরবে তার নিজস্ব সম্পত্তিও আছে। তার রাজনৈতিক দল ফিউচার মুভমেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৌদি আরব।