পার্লামেন্ট স্পিকার জ্যাকব মুদেনদা বলেন, তিনি (প্রেসিডেন্টকে) অভিশংসনের একটি প্রস্তাব হাতে পেয়েছেন।
এ বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য মঙ্গলবার বিকালে একটি হোটেলে পার্লামেন্ট সদস্যরা বসবেন। জিম্বাবুয়ের আইন অনুযায়ী, পার্লামেন্ট সদস্যরা যে কোনও জায়গায় অধিবেশনে বসতে পারবেন।
অভিশংসনের এ প্রক্রিয়া শুরুর মাঝেই মুগাবেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বরখাস্ত হওয়া সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়া।
অজ্ঞাত একটি স্থান থেকে মঙ্গলবার নানগাওয়া বলেন, প্রেসিডেন্টের তার জনগণের পদত্যাগের ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত।
মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে খবরে।
মুগাবে দীর্ঘদিন ধরে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় থাকলেও গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কারণে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাছাড়া দেশে অর্থনৈতিক সঙকট ঘণীভূত হওয়াও তার জনপ্রিয়তা কমার আরেকটি কারণ।
সর্বশেষ ভাইস প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করার পদক্ষেপ নিয়ে মুগাবের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পট প্রস্তুত হয়।
দলের উত্তসূরী নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় এবং মুগাবেকে গৃহবন্দি করে।
১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৩৭ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন মুগাবে।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়াকে তার উত্তরসূরি বিবেচনা করা হলেও গত মাসে হঠাৎ করে সরকার ও দলীয় পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নানগাওয়াকের মত অভিজ্ঞ নেতাকে সরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
সেনা অভ্যূত্থানের পর দেশটির হাজার হাজার মানুষ মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে।
মুগাবের দল জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি থেকে সাবেক এই গেরিলা নেতাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।
৯৩ বছরের এই নেতা সেই আহ্বানে সাড়া না দিলে রোববার দলের কেন্দ্রীয় বিশেষ কমিটির বৈঠক ডেকে তাকে ও তার স্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলীয় প্রধান করা হয় বরখাস্ত নেতা নানগাওয়াকে।
যদিও বরখাস্ত হওয়ার পর ‘তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে দুই সপ্তাহ আগে দেশত্যাগ করেন নানগাওয়া এবং নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারলে দেশে ফিরবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অজ্ঞাত স্থান থেকে এক বিবৃতিতে নানগাওয়া বলেন, “আমি প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট করেই বলেছি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি এখনই দেশে ফিরবো না। কারণ বরখাস্তের পর আমার সঙ্গে যে আচরণ এবং ব্যবহার করা হয়েছে তা (গ্রহণযোগ্য নয়)।”
জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া মুগাবে আফ্রিকার জাতির পিতাদের একজন।
এছাড়া, প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে জাতিগত বিদ্বেষের অবসানে দৃঢ় সমর্থকদের একজন ছিলেন।
এরপরও আফ্রিকার অনেক মানুষের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকে তিনি জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি, গণতন্ত্র এবং বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
বিরোধীদের দমনে তিনি নৃসংসতার আশ্রয়ও নিয়েছেন।