জার্মান রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা, সবচে বড় সঙ্কটে মের্কেল

জার্মানিতে ত্রিপক্ষীয় জোট সরকার গঠনের প্রাথমিক আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংখ্যালঘু সরকার কিংবা নতুন নির্বাচন কোনোটিই এখন অসম্ভব নয়৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের জন্যও এ এক বড় ধাক্কা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 04:15 PM
Updated : 20 Nov 2017, 04:35 PM

মের্কেলের রক্ষণশীল সিডিইউ-সিএসইউ জোট এবং গ্রিন পাটির সঙ্গে জোট সরকার গঠন নিয়ে চার সপ্তাহের দীর্ঘ আলোচনার পর তা ভেস্তে যাওয়ার ঘোষণা দেন উদারপন্থি এফডিপি দলের নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার। প্রতিটি দলের ভিন্ন মতাদর্শের কারণে চাওয়া-পাওয়ায় অসংগতির জন্য আলোচনা সফল হয়নি৷

ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইঞ্জিন বা চালিকাশক্তির দেশ জার্মানিতে সরকার গঠন এখন একেবারে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার গঠনে এ ব্যর্থতায় চ্যান্সেলর হিসাবে ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন মের্কেল৷ তার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মের্কেল এখন বলছেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত চ্যান্সেলর হিসাবে কাজ করে যাবেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে সামনে এগুনোর পথ খুঁজবেন।

জার্মানির প্রেসিডেন্ট সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটকে নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করেছেন এবং সব দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। যেসব দল আলোচনায় ছিল না সেগুলোকেও তিনি আলোচনার টেবিলে আনতে চান এবং দেশের মঙ্গলের জন্য তিনি সব রাজনীতিবিদকেও একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি আপোস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মের্কেল এফডিপি’ কে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে না পারলে তার ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) সংখ্যালঘু সরকার গঠনের চেষ্টা নিতে পারে। অন্যথায়, নতুন নির্বাচনের পট প্রস্তুত হতে পারে।

কোনও সরকারই গঠিত হতে না পারলে শেষমেশ প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন ডাকতে পারেন।

আর নতুন নির্বাচন করাই স্যোশাল ডেমোক্রেটস (এসপিডি) নেতা মার্টিন শুলজের সবচেয়ে পছন্দনীয় বিকল্প। পার্লামেন্টে শুলজের দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল।

শুলজ এরই মধ্যে মের্কেল ব্লকের সঙ্গে আরেকটি বড় জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন এবং ‘নতুন নির্বাচনই জার্মানির জন্য সঠিক পথ’ বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন।

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশটির জাতীয় নির্বাচনে মের্কেলের নেতৃত্বাধীন জোটই জয়ী হয়, কিন্তু সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এ নির্বাচনে অনেক ভোটারই প্রধান ধারার পার্টিগুলোকে ভোট না দিয়ে অন্যান্য দলগুলোকে ভোট দিয়েছে।

এবারই প্রথম অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা কট্টরপন্থি এএফডি দল জার্মান সংসদে প্রবেশ করেছে৷ নির্বাচনে তাদের জয় জোট সরকার গঠনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মের্কেলের শরণার্থী নীতি। এক্ষেত্রে তার নিরপেক্ষ নীতির বিষয়টিকেও আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে৷

জোট সরকারের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় কেবল জার্মানরাই উদ্বিগ্ন নন, উদ্বেগ দেখা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও৷ কারণ এ সমস্যার সমাধান হতে কত সময় লাগবে তা কারও জানা নেই৷

মের্কেল বলেছেন, চ্যান্সেলর হিসাবে সামনের কঠিন দিনগুলোতে তিনি দেশের পরিস্থিতি ভালভাবে সামাল দিতে যথাসম্ভব সবকিছুই করবেন।