কাতালান সঙ্কট: পুজদেমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কাতালুনিয়ার সাবেক নেতা কার্লোস পুজদেমন ও তার সঙ্গে বেলজিয়ামে চলে যাওয়া সাবেক চার কাতালান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন স্পেনের এক বিচারক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2017, 05:59 AM
Updated : 4 Nov 2017, 06:01 AM

বৃহস্পতিবার মাদ্রিদের উচ্চ আদালতের শুনানিতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় শুক্রবার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় বলে খবর বিবিসির।

এদিন আদালতে হাজির হওয়া নয়জন সাবেক কাতালান মন্ত্রীকে জামিন না দিয়ে পুলিশ হেফাজতে পাঠান স্পেনীয় বিচারক কারমেন লামেলা।  পরে এদের মধ্যে ৫০ হাজার ইউরো জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক কাতালান বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তি ভিয়ার।

তাদের সবার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণার নামে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগ করেছেন স্পেনের কৌঁসুলিরা।

স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত সমৃদ্ধ অঞ্চল কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে ১ অক্টোবরের গণভোটের আয়োজন করেছিল পুজদেমনের আঞ্চলিক সরকার। ওই গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন পাওয়ার পর  সপ্তাহখানেক আগে কাতালুনিয়ার পার্লামেন্টেও স্বাধীনতা নিয়ে ভোটের আয়োজন করেছিল পুজদেমন সরকার। এতে ৭০-১০ ভোটে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব জয়ী হওয়ার পর কাতালুনিয়াকে ‘স্বাধীন প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করে আঞ্চলিক পার্লামেন্ট। 

শুরু থেকেই কাতালুনিয়ার বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে আসছিল স্পেন। ১ অক্টোবরের গণভোটকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়েছে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। কাতালান পার্লামেন্ট স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর কাতালুনিয়ায় সরাসরি কেন্দ্রের শাসন চালু করে মাদ্রিদ।

স্বাধীনতা ঘোষণার পরও কোনো দেশের স্বীকৃতি না মেলায় কাতালুনিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে বেগ পেতে হয়নি স্পেনকে। কাতালান স্বাধীনতাপন্থি নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগ আনা হতে পারে এমন সম্ভাবনার মধ্যেই কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে বেলজিয়ামে চলে যান পুজদেমন।

স্পেনের উচ্চ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে এ কাতালান নেতা জানিয়েছিলেন, ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা না দিলে তিনি স্পেনে ফিরবেন না।  বৃহস্পতিবার আট কাতালান মন্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় একে ‘গণতন্ত্রের মূলনীতির ওপর আঘাত’ বলে দাবি করেন তিনি। 

বেলজিয়ামে তার আইনজীবী জানান, পুজদেমনের স্পেনে যাওয়ার জন্য পরিস্থিতি ‘সুবিধাজনক নয়’।

শুক্রবার বেলজিয়ামের রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটরদের মুখপাত্র জানান, তারা পুজদেমনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খতিয়ে দেখে তারপর ব্যবস্থা নেবেন।

পুজদেমন ছাড়া আর যে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তারা হলেন- কাতালুনিয়া আঞ্চলিক সরকারের বরখাস্ত কৃষিমন্ত্রী মেরিটজেল সেরেট, বরখাস্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী এন্টনি কমিন, বরখাস্ত সংস্কৃতিমন্ত্রী লুইজ পুইজ এবং বরখাস্ত শিক্ষামন্ত্রী ক্লারা পনসাতি। 

নিয়ম অনুযায়ী স্পেনের বিচারকরা এখন পুজদেমনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা ব্রাসেলসে পাঠাবেন। ওই পরোয়ানা ঠিক আছে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে বেলজিয়ামের প্রসিকিউটররা ২৪ ঘণ্টা সময় পাবেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেলজিয়ামের আইনসিদ্ধ হলে প্রসিকিউটররা তা আদালতে উপস্থাপন করবেন। এরপর সেখানেই নির্ধারিত হবে পাঁচ কাতালান নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না।

গ্রেপ্তারের পর ৬০ দিনের মধ্যে হস্তান্তরের নিয়ম, তবে পুজদেমনরা যদি এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা না নেন তাহলে সমর্পণে আরও কম সময় লাগবে।

হস্তান্তরের কারণে সন্দেহভাজন অপরাধীর মানবাধিকার বিঘ্নিত হতে পারে এমনটা মনে হলে স্পেনীয় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে বেলজিয়াম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা বর্ণবাদজনিত বৈষম্যের শিকার হতে পারেন কিংবা দেশে ফেরত পাঠালে ন্যায় বিচার পাবেন না এমনটা মনে হলেও পরোয়ানা প্রত্যাখ্যানে বাধা নেই।

পুজদেমন জানিয়েছেন, তিনি বেলজিয়ামের বিচার বিভাগকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। বেলজিয়ান টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতালুনিয়ায় ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে আট মন্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর ঘোষণায় শুক্রবারও বার্সেলোনাসহ কাতালুনিয়ার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার স্বাধীনতাপন্থি।