মার্কিন জ্বালানি খাত ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যে এখনো সাইবার হামলার বিরাট ঝুঁকির মধ্যে আছে এই সতর্কবার্তা তার ইঙ্গিত বলে মনে করছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার রাতে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ইমেই ঠিকানা থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, পারমাণবিক, জ্বালানি, বিমান, পানি ও বিভিন্ন জটিল উৎপাদন শিল্পসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মে মাসের মতো সাইবার হামলা হতে পারে।
এর আগে হ্যাকাররা সফল হয়েছে বলা হলেও নির্দিষ্ট করে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো হামলার শিকার হয়েছে এবং সেগুলো অন্তর্ঘাতমূলক হামলা ছিল কি না প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার করা হয়নি।
ক্ষতিকারক ইমেইল ও আকৃষ্ট করা যায় এমন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হামলাকারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ গত কয়েক মাস ধরে সাইবার হামলা বিষয়ে নজরদারি চালিয়ে আসছিল, জুনে এই সংক্রান্ত একটি গোপন প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় বলে আগেই জানিয়েছিল রয়টার্স।
প্রতিবেদনটিতে হামলার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যেখানে পারমাণবিক, জ্বালানি ও উৎপাদনশীল বিভিন্ন খাতে সাইবার আক্রমণ বিষয়ে সামান্য বর্ণনা ছিল।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র স্কট ম্যাককনেল শুক্রবারের সতর্কবার্তা নিয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি, কি কারণে সরকার এখন এই সতর্কবার্তা দিচ্ছে তা নিয়েও কোনো মন্তব্য নেই তার।
“প্রযুক্তিগত এই সতর্কবার্তায় দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতকে ভয়াবহ সাইবার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা এবং নতুন হুমকি সম্পর্কে সাবধান করতে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই পুনর্ব্যক্ত করা হলো,” বলেন তিনি।
এফবিআইও এই সম্বন্ধে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
হ্যাকাররা এর আগে অন্তত একটি জ্বালানি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালিয়ে সফল হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এফবিআইএ-র নিরাপত্তা গবেষকরা জানিয়েছেন, সিমেন্টেক কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার পরিমাণ বাড়ার তথ্য পেয়েছেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ড্রাগোসের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া সাইবার আক্রমণগুলো রাশিয়ার সরকারের স্বার্থে কাজ করা হ্যাকাররাই করছে।
“এগুলো সাংঘাতিক আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড,” বলেন ড্রাগোসের প্রধান নির্বাহী রবার্ট লি। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই সম্পর্কে আর বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।
রাশিয়া ছাড়াও ড্রাগোস চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া সংশ্লিষ্ট হ্যাকারদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে নজরদারি করে থাকে।
শুক্রবার মার্কিন সরকারের জারি করা সতর্কবার্তা সম্পর্কে অনলাইন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই অবগত বলে রয়টার্সকে ইমেইলে জানিয়েছেন সিমেন্টেকের গবেষক বিক্রম ঠাকুর। বিক্রমদের প্রতিষ্ঠানই সেপ্টেম্বরে এক সতর্কবার্তায় বলেছিল, অত্যাধুনিক হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন জ্বালানি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হ্যাক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্রাউড স্ট্রাইকের দাবি, যে হ্যাকার গ্রুপটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করছে তার নাম বারসার্ক বিয়ার; এটি রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে সংযুক্ত এবং তারা জ্বালানিসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন শিল্পকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
“এখন পর্যন্ত তারা ভয়াবহ কোনো ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পেরেছে বলে আমরা দেখিনি,” রয়টার্সকে দেওয়া ইমেইলে এমনটাই জানান ক্রাউডস্ট্রাইকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম মেয়ারস।