শনিবার মাদ্রিদে মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে কাতালান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত না করে এর ক্ষমতা কমিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত হয় বলে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয় জানিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে স্পেনিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদন লাগবে। ২৭ অক্টোবর সেখানে এই বিষয়ে ভোট হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রাখয়ের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় সিনেটে মন্ত্রিসভার প্রস্তাব সহজেই পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার প্রশ্নে কাতালুনিয়ায় গণভোট আয়োজনের প্রায় তিন সপ্তাহ পর শনিবার রাখয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মন্ত্রিসভার এ জরুরি বৈঠক করেন।
১ অক্টোবরের ওই গণভোটকে অবৈধ বলছে স্পেনিশ সরকার; অন্যদিকে কাতালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনের দাবি, গণভোট তাকে স্বাধীনতা ঘোষণার অনুমতি দিয়েছে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দিয়েছিলেন পুজদেমন; স্পেনের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখার চিন্তায় সেই ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিতেরও আহ্বান জানান তিনি।
মাদ্রিদের এই নতুন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় কাতালান আঞ্চলিক সরকার স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্পেনিশ সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোর শাসন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। সেই অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির সরকার বরখাস্ত করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত বলে বিবিসি জানিয়েছে।
শনিবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে রাখয় জানান, আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, সরকারি কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখার পাশাপাশি সবার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে এই ‘অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত’ নিতে তার সরকার বাধ্য হয়েছে।
“জাতির সাধারণ স্বার্থকে সুরক্ষা দিতে আমরা সিনেটের কাছে কাতালান প্রেসিডেন্ট ও তার সরকারকে বরখাস্তের অনুমতি চাইবো,” বলেন রাখয়।
ছয় মাসের বেশি কাতালুনিয়ায় ১৫৫ অনুচ্ছেদ জারি রাখার ইচ্ছা নেই বলেও জানান স্পেনিশ প্রধানমন্ত্রী।
“পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের ডাক দেবো,” বলেন তিনি।
স্পেন সরকার সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করলেও তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের মধ্যেও।
অনুচ্ছেদটি চালু করে মাদ্রিদ কাতালুনিয়ার স্থানীয় প্রশাসনকে বরখাস্ত করে নতুন একটি প্রশাসন বসাতে পারবে; অর্থনীতি ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে, ডাকতে পারবে নতুন নির্বাচনও। কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে দূর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
কাতালান পার্লামেন্টের অনেক সদস্য সংবিধানের এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন; যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্পেন ও কাতালুনিয়ার এই মুখোমুখি অবস্থান আরও অনেকদূর গড়াবে।