নেরুদার মৃত্যু ‘ক্যান্সারে হয়নি’

নোবেলবিজয়ী কবি পাবলো নেরুদার মৃত্যু ঘিরে রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2017, 05:54 AM
Updated : 21 Oct 2017, 06:13 AM

চিলির এই কবি প্রস্টেটের ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন বলে ১৯৭৩ সালে মৃত্যুর পর জানানো হয়েছিল।

তবে একনায়ক আগুস্তো পিনোশের ক্ষমতা দখলের দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিউনিস্ট নেরুদার মৃত্যু নিয়ে তখনই সন্দেহ উঠেছিল।

নেরুদার সাবেক গাড়িচালক ম্যানুয়েল আরায়া দাবি করেছিলেন, ক্যান্সার নয়, বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয় এই কবিকে।

সরকারি ভাষ্য নিয়ে ৪৪ বছর ধরে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের মধ্যে শুক্রবার একদল ফরেনসিক গবেষক দাবি করেছেন, প্রস্টেটের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়নি নেরুদার।

নেরুদার দেহাবশেষ থেকে নমুনা নিয়ে সম্প্রতি পরীক্ষা করে গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। 

তবে ঠিক কী কারণে নেরুদার মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি গবেষক দল। তবে তাকে পরিকল্পিত খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

গবেষক দলের এক  সংবাদ সম্মেলনে ডা. অর্লিও লুনা বলেন, প্রস্টেটের ক্যান্সার যে নেরুদার মৃত্যুর কারণ নয়, সে বিষয়ে তারা ‘একশ ভাগ নিশ্চিত’। তার মৃত্যু সনদে ‘প্রকৃত কারণ আসেনি’।

এই কবি প্রস্টেটের ক্যান্সারে ভুগছিলেনি ঠিকই, তবে ৬৯ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখন তার ক্ষেত্রে তা জীবনহানির মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল না বলে গবেষকরা এখন বলছেন।

স্পেনের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুনা বলেছেন, তারা নেরুদার দেহাবশেষে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন, যা গবেষণাগারে তৈরি বলে তাদের মনে হচ্ছে।

মৃত্যু ঘটাতে এই ব্যাকটেরিয়াই নেরুদার দেহে প্রবেশ করানো হয়েছিল কি না, সেই গবেষণা এখন চালাচ্ছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এই পরীক্ষার ফলাফল আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ডা. লুনা।

পাবলো নেরুদা; কমিউনিস্টরা এখন স্মরণ করেন যে কবিকে

চিলির সমাজতন্ত্রমুখী জাতীয়তাবাদী নেতা সালভাদর আয়েন্দের সরকারকে হটিয়ে পিনোশের ক্ষমতা দখলের ১২ দিন পর ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে নেরুদার।

১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী কমিউনিস্ট নেরুদা ছিলেন আয়েন্দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

তার গাড়িচালক আরায়ার দাবি, নেরুদা যখন ঘুমে ছিলেন, তখন তার দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল, তাতেই তার ‍মৃত্যু ঘটে।

২০১৩ সালেও বিসিসিকে এক সাক্ষাৎকারে আরায়া বলেছিলেন, “তাকে হত্যাই করা হয়েছিল। মৃত্যুর আগেও আমি এই কথা থেকে একচুলও নড়ব না।”

পিনোশে ক্ষমতা দখলের পর নেরুদাকে মেক্সিকোতে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিলেন। নেরুদা দেশ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে আরায়ার দাবি।

এরপর থেকে নেরুদার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল; ক্ষমতা হারিয়ে ২০০৬ সালে পিনোশে মারা যাওয়ার পর মৃত্যুর তদন্তের দাবি জোরাল হয়ে হয়ে ওঠে।

এই প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে নেরুদার দেহাবশেষ তুলে পুনরায় পরীক্ষার আদেশ দেয় চিলির আদালত।