কাতালান সঙ্কটে জড়াবে না ইউরোপ: টাস্ক

ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, কাতালুনিয়া বিষয়ে ‘উদ্বেগ’ থাকলেও ইউরোপ এই সঙ্কটে জড়াবে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2017, 05:31 AM
Updated : 20 Oct 2017, 05:35 AM

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টাস্ক একথা বলেন বলে খবর বিবিসির।

স্বাধীনতা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্পেন কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পথে হাঁটছে, এমন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপীয়ান জোটের কোনো শীর্ষ নির্বাহী এই বিষয়ে মন্তব্য করলেন।

“কোনো ধরণের মধ্যস্থতা, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো সুযোগ নেই, কোনো জায়গা নেই,” ইইউ কাউন্সিল সামিটের আগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন টাস্ক।

সামিটের আলোচ্যসূচিতে এই বিষয়টি নেই জানিয়ে ইউরোপ আগের মতই অখণ্ড স্পেনের পক্ষে থাকবে বলেও মন্তব্য তার। 

“অনেক কারণে অবশ্যই আমাকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। লুকানোর কিছু নেই যে স্পেনের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। কিন্তু আমাদের অবস্থানও স্পষ্ট।”

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা এর আগে অখণ্ড স্পেনের পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছিলেন।

ইউরোপের এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কাতালুনিয়াকে সমর্থন না দেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘পশ্চিমের দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুতিন বলেন, পশ্চিমা জাতিগুলো রাশিয়ার বন্ধু হিসেবে পরিচিত সার্বিয়া থেকে কসোভোর স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, আর এখন তারা কাতালুনিয়া এবং ইরাকি কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার বিপক্ষে।

পুতিন ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সম্প্রসারণের বিরোধীদেরও একহাত নেন। ওই সম্প্রসারণের কারণে রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।

টাস্কের মন্তব্যের কিছু সময় আগে মাদ্রিদ শনিবার থেকেই কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। কাতালান নেতা কার্লেস পুজদেমনের ‘আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা’ ঘোষণার হুমকি পাওয়ার পর স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কাতালুনিয়ার শাসনভার কেন্দ্রের হাতে নিতে শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। রাখয় ওই দিনই সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার ঘোষণা দিতে পারেন।

মাদ্রিদের এ হুমকিতে শঙ্কিত দেখাচ্ছে না কাতালান আঞ্চলিক সরকারকে।এর আগে কাতালান নেতা পুজদেমন বলেছিলেন, স্পেনের ‘দমননীতি চলতে থাকলে’ আঞ্চলিক পার্লামেন্ট স্বাধীনতার প্রশ্নে সরাসরি ভোটের আয়োজন করবেন তিনি, যাতে স্বাধীনতার আইনি ভিত্তি আরও সুস্পষ্ট হয়।

কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে হলে স্পেনকে ১৯৭৮ সালের সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করতে হবে। আঞ্চলিক সরকার আইন ভঙ্গ করছে এই কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুচ্ছেদটি চালু করলেও স্পেন পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া সেটি পুরোপুরি কার্যকর করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যে সহজেই স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দিতে পারে কাতালান স্বাধীনতাপন্থিরা।

রাজনৈতিক এই অস্থিরতায় ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ স্পেনের প্রবৃদ্ধির হার কমে আসবে বলে পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞদের; সঙ্কটের প্রভাব পড়ছে অভিন্ন মুদ্রা ইউরোতেও।

এই মাসের শুরুতে হওয়া গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ৯০ শতাংশের রায় পড়ে বলে ভাষ্য কাতালান সরকারের। স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গণভোটের আয়োজন করা হয়। যদিও ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে সেদিন ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট জমা পড়েনি।

ওই ফলাফলের ভিত্তিতেই ১০ অক্টোবর কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দেন পুজদেমন; মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাখয় স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে এই সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত কাতালান নেতাকে সময় দেন। কাতালুনিয়ার অবস্থান যদি স্বাধীনতার পক্ষে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত বদলাতে দেওয়া হয় ‘আরও চারদিন’।

কাতালান নেতার এই সময়সীমার মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মাদ্রিদ তা প্রত্যাখ্যান করে স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পথেই হাঁটছে।

স্পেন সরকার সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করলেও তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের মধ্যেও।

অনুচ্ছেদটি চালু করে মাদ্রিদ কাতালুনিয়ার স্থানীয় প্রশাসনকে বরখাস্ত করে নতুন একটি প্রশাসন বসাতে পারবে; অর্থনীতি ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে, ডাকতে পারবে নতুন নির্বাচনও। কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে দূর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

কাতালান পার্লামেন্টের অনেক সদস্য সংবিধানের এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন; যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্পেন ও কাতালুনিয়ার এই মুখোমুখি অবস্থান আরও অনেকদূর গড়াবে।