মমতার আচরণে ‘অপমানিত’ হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়

কংগ্রেসের এক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যাওয়া তাকে ‘অপদস্থ ও অপমানিত’ করেছিল বলে সম্প্রতি নিজের প্রকাশিত বইয়ে জানিয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ।সম্প্রতি নিজের বইয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জাত বিদ্রোহী’বলে অভিহিত করেছেন ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 09:26 AM
Updated : 18 Oct 2017, 02:17 PM

নিজের বইয়ে প্রণব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জাত বিদ্রোহী’ অভিহিত করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।

‘দ্য কোয়ালিশান ইয়ারস’ নামের আত্মজীবনীমূলক বইটিতে সাবেক কংগ্রেস নেতা প্রণব ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলী এবং সেগুলোর পেছনের কথা তুলে ধরেছেন। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই স্মৃতিচারণ।

মমতার মধ্যে একটা জ্যোতি আছে ‘যা ব্যাখ্যা করা কঠিন কিন্তু এড়ানোও অসম্ভব’ মন্তব্য করে সদ্যবিদায়ী এই রাষ্ট্রপতি তার বইতে বলেন, মমতা ভয়ডরহীন ও আক্রমণাত্মকভাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

মমতার বর্তমান সাফল্যকে ‘তার নিজস্ব সংগ্রামের ফসল’ বলেও মন্তব্য করেছেন প্রণব।

“মমতা একজন জাত বিদ্রোহী,” মন্তব্য করে তিনি ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের দলীয় নির্বাচনের কথা স্মরণ করেছেন, যে নির্বাচনে মমতা পরাজিত হয়েছিলেন।

দলের মধ্যে ‘নোংরা কোন্দল’ এড়াতে মুখোমুখি লড়াইয়ের বদলে মমতাসহ পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা ঐক্যমতের নির্বাচন চাইছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস প্রধান পি ভি নরসিমা রাও প্রণবকেই এর সমাধান বের করতে বলেন।

“ওই বছর শীতের মধ্যে কোনো একদিন আমি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে একটি বৈঠকে আসতে অনুরোধ করি, যেন তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরতে পারেন।

“ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে মমতা হঠাৎ করে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন এবং আমি অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি এমন অভিযোগ আনেন। ওই সময় তিনি সাংগঠনিক নির্বাচনেরও দাবি তোলেন; বলেন, তিনি সবসময়ই দলের ভেতর নির্বাচনের পক্ষে, কেননা এর মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও সংগঠনের সব বিষয়ে মত জানাতে পারে।”

বৈঠকে প্রণব ও অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মমতা ‘সাংগঠনিক পদ বন্টনের’ মাধ্যমে ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত’ করারও অভিযোগ আনেন বলে বইয়ে বলা হয়।

“এই প্রতিক্রিয়া ও মিথ্যা অভিযোগ শুনে বিস্মিত হয়ে বললাম, তিনিসহ রাজ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের চাওয়ার প্রেক্ষিতেই আপোসরফার জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। মমতা সেটি অস্বীকার করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি নির্বাচন দাবি করে ঝড়ের বেগে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। আমি যা দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম; অপদস্থ ও অপমানিত বোধ করেছিলাম,” বলেছেন প্রণব।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (ডব্লিউবিপিসিসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গোপন ব্যালটে সোমেন মিত্রের কাছে অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন মমতা। ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’-এ ওই ঘটনারও স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি।

“ফল ঘোষণার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। ক্ষুব্ধ মমতা আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনি খুশি হয়েছেন তো? আমাকে পরাজিত করতে আপনার প্রয়াস সফল হয়েছে তো?,’ এই বিষয়ে তার ভাবনা যে পুরোপুরি ভুল ছিল, আমি তাকে সেটা বললাম।” 

মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উত্থান যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে বইয়ে সেকথাও বলেন প্রণব। ১৯৯৭ সালে কলকাতা প্লেনারির পর মমতা যে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন সেকথাও স্বীকার করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

১৯৮৪ সালে বামপন্থিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যাদবপুর আসন থেকে সিপিএমের সোমনাথা চ্যাটার্জিকে হারিয়ে মমতার বিজয়ী হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রণব।

“সেটা ছিল এক অসাধারণ বিজয়, তখন থেকেই তিনি ছিলেন সত্যিকারের জায়ান্ট কিলার। পুরো রাজনৈতিক জীবনে মুখোমুখি হওয়া অসংখ্য কঠিন বাধাকে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন, চেষ্টা করেছেন সেগুলোকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে।”