ব্যর্থ এক অভ্যুত্থান চেষ্টাকে কারণ দেখিয়ে বামপন্থি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর চালানো ওই ‘রাজনৈতিক শুদ্ধি’ অভিযানে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারালেও কোনো উচ্চবাচ্য করেনি ওয়াশিংটন।
বিবিসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মুসলিম বেসামরিক বাহিনীগুলো যে সেসময় যে লাখ লাখ মানুষকে ‘জবাইয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল’ তা জানতে পেরেও নিশ্চুপ ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন।
বিশ শতকের অন্যতম এই ভয়াবহ গণহত্যায় কেবল ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬-র মধ্যেই অন্তত পাঁচ লাখ বাম মতাদর্শিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়াতে পারে বলেও অনেকের ধারণা।
ওয়াশিংটন সেসময় নীরব থাকলেও পাঁচ দশক পর প্রকাশ পাওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে- বর্বর গণহত্যাটি সম্পর্কে তাদের কাছে ছিল বিস্তৃত তথ্য।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মীরা সেনাবাহিনীর ছয় জেনারেল হত্যার সঙ্গে জড়িত, এমন অভিযোগের সূত্র ধরে গণহত্যার শুরু। এরপর ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম দলগুলোকে ‘পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে’ যে ‘বর্বর’ ও ‘নির্বিচারে হত্যা’ অভিযান চালিয়েছিল মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাঠানো সেসময়ের টেলিগ্রামগুলোতে এর বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
১৯৬৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর পূর্ব জাভার মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মীর টেলিগ্রামে বলা হয়েছে- “হত্যার জন্য জনবহুল এলাকার বাইরে সন্দেহভাজনদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অন্যদের মতোই তাদের মৃতদেহ নদীতে না ছুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে।”
সন্দেহভাজন কমিউনিস্ট বন্দিদের ‘জবাই করতে’ বিভিন্ন বেসামরিক দলের কাছে প্রেরণ করা হতো বলেও ওই টেলিগ্রামে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই মাসের ১৭ তারিখ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারির পাঠানো টেলিগ্রামে ছিল ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন এলাকার কমিউনিস্ট নেতাদের নামধাম, যারা ‘হয় হত্যার শিকার হয়েছেন কিংবা বন্দি ছিলেন’।
ডিসেম্বরেই সুমাত্রার মার্কিন কন্সুলেট থেকে পাঠানো এক বার্তায় লেখা রয়েছে, মুসলিম ধর্মীয় নেতারা তখন ফতোয়া দিয়ে বলছেন- ‘সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের হত্যা করার নির্দেশ আছে ধর্মে’।
কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অসংখ্য ব্যক্তিও তখন ‘ব্যক্তিগত শত্রুতার’ জের ধরে মৌলবাদী গোষ্ঠী নাহদলাতুল উলামার যুব সংগঠনের বর্বর গণহত্যার শিকার হন বলেও একই সময়ে পাঠানো আরেকটি টেলিগ্রামে বলা হয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেনাবাহিনী ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কমিউনিস্টদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সৃষ্ট ওই গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় এখনো ইন্দোনেশিয়াতে ‘অলিখিত নিষেধাজ্ঞা’ আছে বলে মন্তব্য বিবিসির। সেনাবাহিনী এবং ইসলামী মতাদর্শিক রাজনৈতিক দলগুলো বেশি প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই ওই গণহত্যার সময় কী ঘটেছিল তা জানলেও মুখ খুলতে চান না।
১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত জাকার্তার মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন ফাইল, দৈনন্দিন নথি ও মেমোর মধ্যে ‘গোপনীয়’ হিসেবে বিবেচিত ৩৯টি নথি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্কাইভস ও রেকর্ড প্রশাসনের ন্যাশনাল ডিক্লাসিফিকেশন সেন্টার প্রকাশ করে। সেখানেই গণহত্যার এসব খতিয়ান উঠে আসে।
এ বছরের শেষের দিকে এই সংক্রান্ত সিআইএ-র তথ্যও অবমুক্ত করার কথা।