ট্রাম্পের সর্বশেষ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আদালতে স্থগিত

আটটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে ট্রাম্পের জারি করা সর্বশেষ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বাধ সেধেছে আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 05:26 AM
Updated : 18 Oct 2017, 05:27 AM

হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার হনুলুলুর এক ফেডারেল বিচারক ওই নিষেধাজ্ঞায় সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ট্রাম্পের দেওয়া তৃতীয় দফা এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

স্থগিতাদেশের ফলে এখন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ছয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা থাকলো না।  হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের আবেদনে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক ও ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তাদের ব্যাপারে কিছু না থাকায় তাদের ক্ষেত্রে জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

সর্বশেষ এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সেপ্টেম্বরে শেষ সপ্তাহে জারি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এর আগে মার্চেও ছয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেবারও ফেডারেল আদালতগুলো নিষেধাজ্ঞায় আপত্তি জানিয়েছিল, পরে সুপ্রিম কোর্ট আদেশটি আংশিক কার্যকরে সম্মত হয়।

দ্বিতীয় দফা ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও সোমালিয়ার সঙ্গে সেপ্টেম্বরের নতুন নিষেধাজ্ঞায় চাদ ও উত্তর কোরিয়ার নাগরিক এবং ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হয়; আগের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়া হয় সুদানের নাগরিকরা।

‘মুসলিম ব্যান’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়া আগের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছয় মাস থাকলেও নতুন নিষেধাজ্ঞায় সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি।

নতুন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে করা হাওয়াইয়ের আবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় অভিবাসন আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা রাখেন না।

নির্বাচনী প্রচারে মুসলমানদের ‘যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেন না’বলে ট্রাম্প যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার ধারাবাহিকতাতেই তৃতীয় দফা এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বলেও দাবি তাদের।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউস বলছে, আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পর্যালোচনার পর নতুন এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

শুনানি শেষে মঙ্গলবার ডিস্ট্রিক্ট জজ ডেরিক ওয়াটসন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে স্থগিতাদেশ দেন। এর আগে মার্চে দ্বিতীয় দফা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায়ও বাধ সেধেছিলেন তিনি।

ওয়াটসন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আদেশ আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোর মতোই ত্রুটিপূর্ণ।

“ছয়টি নির্দিষ্ট দেশের যে ১৫ কোটি নাগরিকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা কী করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে নতুন আদেশে সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই,” বলেন তিনি।

আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোতে ট্রাম্প ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন, ফেডারেল আপিল কোর্টের এই সংক্রান্ত আদেশও নতুন নিষেধাজ্ঞায় অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য বিচারকের।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে আদালতের স্থগিতাদেশকে ‘বিপজ্জনকভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, এটি আমেরিকান নাগরিকদের নিরাপদ রাখার চেষ্টাকে খাটো করলো।

“অভিবাসন ব্যবস্থার অখণ্ডতা ও আমাদের জাতিকে সুরক্ষিত রাখতে, ন্যূনতম নিরাপত্তা মান নিশ্চিতে বিদেশি এসব রাষ্ট্রগুলোর ওপর দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব অপরিসীম,”বলেন তিনি।   

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আদালত শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিবিসি বলছে, তৃতীয় দফা জারি করা এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে আরও কয়েকটি আইনী লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন, ম্যাসাচুসেটস, ক্যালিফোর্নিয়া, অরেগন, নিউ ইয়র্ক ও মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ আদেশ বাতিলে সিয়াটলের আদালতে আবেদন করেছে।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও অন্যান্য নাগরিক গোষ্ঠীগুলোও ট্রাম্পের এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।