২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনেস্কো ছাড়ার এ সিদ্ধান্তে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছ থেকে সরকারি নোটিশ পাওয়ার পর ইউনেস্কোর মহাপরিচালক হিসাবে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনেস্কো থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।”
এ পদক্ষেপকে জাতিসংঘ পরিবার এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি ক্ষতি বলে বর্ণনা করেন বোকোভা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, ইউনেস্কোতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তারা একটি পর্যবেক্ষণ মিশন প্রতিষ্ঠা করবে। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কোর সদস্য না হয়েও সংগঠনটির বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখতে পারবে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র হালকাভাবে ইউনেস্কো ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ইউনেস্কোয় বাড়তে থাকা বকেয়া, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ সংগঠনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন বলেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে।”
ইউনেস্কোর কয়েকটি সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের কাছ থেকে সমালোচনার শিকার হয়েছে। সেসবের প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্রের আজকের এ সিদ্ধান্ত।
২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রতিবাদে ইউনেস্কোয় বাজেট অনুদান বন্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর গতবছর পবিত্র স্থান জেরুজালেমের সঙ্গে ইহুদিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি একটি প্রস্তাবনায় উল্লেখ না করায় ইসরায়েল ইউনেস্কোর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে।
আর এবছর পশ্চিম তীরের পুরোনো হেবরন নগরীকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষণা করায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইউনেস্কোর সমালোচনা করেন।
তবে ‘ফরেইন পলিসি’ ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু এসব কারণই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনেস্কো ছাড়ার পেছনে আরও একটি উদ্দেশ্য কাজ করেছে। আর তা হচ্ছে, অর্থ বাঁচানো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্যান্য দেশের তুলনায় তার দেশ বেশি অর্থ ব্যয় করছে বলে অভিযোগ তুলে সমালোচিত হয়েছেন। জাতিসংঘের নিয়মিত বাজেটের ২২ শতাংশ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় ২৮ শতাংশ তহবিল দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ইউনেস্কোয় বর্তমানে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্ত জানাল।
ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কয়েকসপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময়ই ইউনেস্কো ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ইউনেস্কোর নতুন নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের সময় ইউনেস্কো থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তবে পরে তারা প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে আবার ইউনেস্কোতে যোগ দেয়।