রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্থানীয় নয়: মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের স্থানীয় বাসিন্দা নন বলে দাবি করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 11:02 AM
Updated : 27 Oct 2017, 02:43 AM

বুধবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মারসিয়েলের সঙ্গে সিনিয়র জেনারেল হ্লাইংয়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

হ্লাইংয়ের ফেইসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার সকালে পোস্ট করা এক প্রতিবেদন সূত্রে এ বৈঠকের খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে হ্লাইং উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর তার বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলেননি এবং বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে জেনারেল হ্লাইং রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট সম্পর্কে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে নিজের মনোভাব তুলে ধরেছেন। এই বৈঠকের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবে এমন কথা মাথায় রেখেই তিনি এমনটি করেছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তিনি ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করেন এবং সমস্যাটির জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের দায়ী করেন।

মারসিয়েলকে তিনি বলেন, “বাঙালিদের এই দেশে মিয়ানমার নিয়ে আসেনি, উপনিবেশবাদীরা নিয়ে এসেছিল। তারা এখানকার স্থানীয় নয়, আর রেকর্ডে প্রমাণ আছে উপনিবেশিক আমলে তাদের রোহিঙ্গা বলা হত না, বাঙালি বলা হত।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রাওয়াদ আল হুসেইন উত্তর রাখাইনের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের দমনাভিযানকে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নিখুঁত উদাহরণ’ বর্ণনা করে ‘শক্তি প্রয়োগে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার নিষ্ঠুর পরিকল্পনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে হ্লাইং এ অভিযোগের কোনো উল্লেখই করেননি; বরং পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, বিদ্রোহীরা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন ৯০ জন হিন্দু ও ৩০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। 

তিনি জানান, বিদ্রোহীরা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের একটি কর্মসূচীর বিরোধীতা করছে, যে কর্মসূচীতে তাদের বাঙালি বলা হয়েছে, হামলার পেছনের কারণ এটাই।

হামলার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্রোহীদের দায়ী করে তিনি বলেন, “এআরএসএ-র নেতৃত্বে স্থানীয় বাঙালিরা এসব হামলা চালিয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই নিরাপত্তাহীনবোধ করে তারা পালিয়ে গেছে।

“বাঙালিদের সত্যিকারের জায়গা বাংলা। সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবে এ ধারণা থেকেই সম্ভবত সেখানে পালিয়েছে তারা।”

অনেক ‘বড় সংখ্যক’ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে এ কথা বলার মধ্যে বাড়াবাড়ি আছে এবং ‘পর্দার আড়াল থেকে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব প্রচারণা ও উস্কানি’ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।  

তবে কতো সংখ্যাক মানুষ পালিয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন তা বিস্তারিত জানাননি হ্লাইং, ‘প্রকৃত পরিস্থিতি’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচারিত হওয়া দরকার মনে করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই জেনারেল বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা সত্বেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি নিয়ে হ্লাইং এর যে তেমন অনুভূতি নেই তার আপোষহীন মনোভাবেও এর ইঙ্গিত মিলেছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের মানুষদের মধ্যে তেমন কোনো সহানুভূতি নেই এবং তাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান সেখানে একটি জনপ্রিয় বিষয় বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।