মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি তারা কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
কাতালান নেতাদের সই করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “কাতালান প্রজাতন্ত্রকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আমরা সকল রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাই।”
তাদের এই পদক্ষেপকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে মাদ্রিদ।
স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাতালুনিয়ার মানুষ গত ১ অক্টোবর যে গণভোটে অংশ নেয়, সেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে পড়ে বলে কাতালান সরকারের ভাষ্য।
তবে বিবিসি লিখেছে, কাতালুনিয়ার স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করায় ভোট পড়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মেরও খবর পাওয়া গেছে।
ভোটের ওই ফলাফলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে মাদ্রিদ। স্পেনের সাংবিধানিক আদালত এর ফল স্থগিত করেছে।
গণভোটের রায় পক্ষে গেলে স্বাধীনতার পথ সুগম করতে গত মাসে একটি আইন পাস করে কাতালুনিয়ার আঞ্চলিক সরকার। পুজদেমনের আহ্বান পেলে সেই আইন অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারত কাতালান পার্লামেন্ট।
কিন্তু পার্লামেন্টে পুজদেমনের ভাষণ সামনে রেখে ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলো তার উপর চাপ বাড়াচ্ছিল, যাতে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেন।
পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে পুজদেমন বলেন, মাদ্রিদ থেকে আলাদা হতে হবে- এটাই জনগণের রায়। তবে এ নিয়ে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমনের পক্ষে তিনি।
“আমরা সবাই একই সমাজের মানুষ। আমাদের সবাইকে একসঙ্গেই এগিয়ে যেতে হবে। আর সেই অগ্রগতি আসতে পারে গণতন্ত্র ও শান্তির পথে।”
পুজদেমন এও বলেছেন, অতীতে কাতালুনিয়ার মানুষকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের ওপর অনেক বেশি করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মাদ্রিদ সরকার।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সই করলেও পার্লামেন্টকে তিনি এর কার্যকারিতা আপাতত স্থগিত রাখতে বলেন, যাতে স্পেন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা থাকে।
সান্তামারিয়া বলেন, পুজদেমন কাতালুনিয়াকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসে ইতিহাসের সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি ঠেলে দিয়েছেন।
“আজ যে বক্তৃতা তিনি দিয়েছেন, সেটা এমন এক ব্যক্তির বক্তব্য, যিনি জানেন না তিনি কোথায় আছেন, কোথায় তিনি যাচ্ছেন অথবা কাদের তিনি সঙ্গে নিতে চান।”
সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিসভার অতি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়।
স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বসবাস কাতালুনিয়ায়। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ২৫.৬ শতাংশ এ অঞ্চল থেকেই আসে। মোট বিদেশি বিনিয়োগের ২০.৭ শতাংশ পাওয়া কাতালুনিয়াই স্পেনের জিডিপির ১৯ শতাংশের যোগান দেয়।
গৃহযুদ্ধের আগে কাতালুনিয়া আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন পেলেও ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাসনের সময় তা নানাভাবে খর্ব করা হয়। ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর কাতালান জাতীয়তাবাদ ফের শক্তিশালী হতে শুরু করে, আন্দোলনের মুখে ১৯৭৮ সালে তাদের স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
স্পেনের পার্লামেন্ট ২০০৬ সালে নতুন আইন করে কাতালুনিয়ার আঞ্চলিক সরকারের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা দেয়। কাতালানদের দেওয়া হয় জাতির মর্যাদা। কিন্তু পরে স্পেনের সাংবিধানিক আদালতে সেসব বাতিল হয়ে যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্পেন থেকে আলাদা হয়ে গেলে কাতালুনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নেও থাকবে না।