মিয়ানমার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে: এইচআরডব্লিউ

মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2017, 01:32 PM
Updated : 26 Sept 2017, 01:58 PM

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দেশটির ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

এইচআরডব্লিউ এর আইন ও  নীতি বিষয়ক পরিচালক জেমস রোস মঙ্গলবার বলেন, “বার্মিজ সেনারা রাখাইন রাজ্য থেকে নৃশংসভাবে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে।”

“এভাবে গ্রামের পর গ্রামে তণ্ডব চালিয়ে বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে লোকজনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা, সবই মানবতা বিরোধী অপরাধ।” 

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেওয়া বিধানে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বিতাড়নের কথাও বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, “যখন কোনও এলাকার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কোনও সেনাবাহিনীর ব্যাপক এবং পরিকল্পিত অভিযান সংগঠিত হয় সেটিই মানবতা বিরোধী অপরাধ।”

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে  মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালালে  পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে সহিংস নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে তাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে মনে করে জাতিসংঘ।

এ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, “জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গাদের) এক তৃতীয়াংশকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে-এটাকে বোঝানোর জন্য আপনি কি আর কোনও ভাল শব্দ পাবেন?”

জতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ, পরিস্থিতির উত্তরণ, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা বলে কোনও জাতিসত্ত্বা তার দেশে কখনওই ছিল না। যারা নিজেদের রোহিঙ্গা বলছে,তারা আসলে ‘বাঙালি চরমপন্থি’।

মিয়ানমার সরকারের দাবি, তারা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কোনো ক্ষতি করছে না। বরং তারা সেখানে ওই সব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যারা সেখানে সেনাদের ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের নির্যাতন করছে।

কিন্তু গবেষণা এবং স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে রাখাইনে বিতাড়ন, হত্যা ও হত্যা চেষ্টা, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ‍জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থারটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত দ্রুত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা এবং ‍অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।