‘ধীরে’ বিকশিত হত নিয়ান্ডারথাল মানব মস্তিস্ক

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ান্ডারথাল মানবদের মস্তিষ্ক আমাদের চেয়ে ‘ধীরগতিতে’ বিকশিত হত। নতুন এক গবেষণায় পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2017, 02:09 PM
Updated : 22 Sept 2017, 02:44 PM

৪৯ হাজার বছর আগে মারা যাওয়া প্রায় সাড়ে ৭ বছর বয়সী এক নিয়ান্ডারথাল বালকের কঙ্কাল পরীক্ষা করে স্পেনের বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান বলে জানিয়েছে বিবিসি ।

উত্তর স্পেনের এল সিদরান সাইট থেকে কঙ্কালটি নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষার সময়ও সেটি বেশ ভালো অবস্থায় ছিল বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

কঙ্কালের মুখের ভেতর ছিল শিশুকালীন ও পূর্ণাঙ্গ বয়সের দাঁতের মিশ্রণ; এ কারণে বয়স নির্ধারণে সুবিধা হয়েছে বলে জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত নিবন্ধে বলেন বিজ্ঞানীরা।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তারা দেখেন, ওই বয়সে নিয়ান্ডারথাল শিশুটির মস্তিষ্ক তখনকার পূর্ণাঙ্গ মানুষের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ গঠিত হয়েছে। 

অথচ একই বয়সী আধুনিক মানব (হোমো স্যাপিয়েন্স) শিশু স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের ৯৫ শতাংশ ধারণ করতে পারে।

আগের গবেষণাগুলোতে এর উল্টো ফল মিলেছিল; সে অনুযায়ী, নিয়ান্ডারথাল মানব মস্তিষ্কের বিকাশ আমাদের চেয়ে দ্রুত ছিল বলে ধারণা করা হত।

বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, প্রাণীজগতে আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশই সবচেয়ে ধীরগতির, সে কারণেই প্রজাতির অন্যান্য প্রাণী ও আদিম মানুষের তুলনায় আমাদের শৈশব তুলনামূলক দীর্ঘ হয়। কিন্ত নতুন গবেষণা এ ধারণা পাল্টে দিল।

“এটি অবাক ব্যাপার। যখন শুরু করেছিলাম আমরা ভেবেছিলাম আগের গবেষণাগুলোর মতই তথ্য মিলবে, কিন্তু পেলাম উল্টোটা,” বলেন মাদ্রিদের মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল সায়েন্সের অধ্যাপক আন্তোনিও রোসাস।

রোসাস ও তার দলের সদস্যরা বলছেন, তাদের পাওয়া তথ্যই সঠিক। আগের গবেষণাগুলো ভুল ছিল।

কারণ, এবারই প্রথম কোনও নিয়ান্ডারথাল শিশুর পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা করতে পেরেছেন বলে দাবি তাদের; পাশাপাশি যে বয়সী শিশুর কঙ্কাল নিয়ে তারা কাজ করেছেন সে বয়সটাই ছিল মস্তিষ্ক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।

রোসাসের দল কঙ্কালটির মেরুদণ্ডে বেশ কিছু ছোট হাড়েরও অস্তিত্ব পেয়েছেন, ছয় বছর বয়সেই হোমো সেপিয়েন্স শিশুর যে হাড়গুলো গলে যায়।

নিয়ান্ডারথালরা যে আমাদের চেয়ে বেশি প্রাচীন মানব নয় নতুন এ গবেষণা সে প্রমাণই তুলে ধরেছে। এতদিন ধরে বিশালদেহী নিয়ান্ডারথালদের যেভাবে ‘বর্বর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হত, তাও সঠিক নয়।

নিয়ান্ডারথাল মানবরা অনেকটা আমাদের মতই ছিল, বলেন অধ্যাপক রোসাস।

ধীরগতির বিকাশের কারণে তাদের মস্তিষ্ক আমাদের চেয়েও উন্নত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও সহজ ব্যাখ্যা দিয়ে রোসাস বলেন, “নিয়ান্ডারথালদের ছিল বিশাল মস্তিষ্ক, বড় শরীর। মস্তিষ্ক ও শরীর প্রাপ্তবয়স্কের আকার ধারণে বেশি সময় নিত বলেই তাদের মস্তিষ্কের গঠন হত ধীরগতিতে,” বলেন তিনি।