গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ওমানের পাঁচ এবং কাতারের তিন শেখ আছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
শেখদের সঙ্গে তিন কাজীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যার মধ্যে মুম্বাইয়ের একজন প্রধান কাজীও আছেন।
এই কাজীরা বিয়ের জাল প্রত্যার্পণ দিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিদেশে পাচারে সাহায্য করেন বলে অভিযোগ পুলিশের।
হায়দ্রাবাদ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেবল সম্পদশালীরাই ওই বাজারে যেতেন না। দালালরা ‘অটোওয়ালা’, ‘অ্যাম্বাসেডরওয়ালা’ ও ‘ইনোভাওয়ালা’ হিসেবে খদ্দেরদের চিহ্নিত করতেন; ‘ইনোভাওয়ালা’-রা মূলত শহরের অভিজাত হোটেলে থাকেন।
“বৃদ্ধ এক ব্যক্তি তার ছেলে এবং বন্ধুদের নিয়ে বিয়ে করতে এসেছেন; তার কাছে বিয়ের সার্টিফিকেটও আছে। আসলে তিনি চাইছেন এমন এক কর্মচারি যাকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে,” বলেন তাজউদ্দিন।
পুলিশ বলছে, গোপনে চালানো এই ‘বউ বাজারে’ আক্ষরিক অর্থেই মেয়েরা ক্রেতাদের সামনে হেঁটে বেড়ায়। নিলামের মতোই প্রথমে তাদের জন্য একটি দাম নির্দিষ্ট করা হয়।
আরব শেখরা সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী মেয়ে বেছে নেন এবং দাম ঠিক করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮০ বছর বয়সী কাতারের এক শেখ আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আব্দুল্লাহ নামে আরেকজন আছেন, যিনি এভাবেই বিয়ের নামে দশের অধিক মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছেন।
গত মাসে এনডিটিভি হায়দ্রাবাদের ১৬ বছর বয়সী এক মেয়ের প্রতারিত হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যে ৬১ বছর বয়সী ওমানের এক নাগরিককে বিয়ে করেছিল।
ইউনিয়ন মন্ত্রী মানেকা গান্ধী ওই মেয়ের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই পুলিশ হায়দ্রাবাদে গোপনে পরিচালিত এই ‘বউ বাজারের’ তথ্য পায় এবং সাঁড়াশি অভিযান চালায়।
বিয়ের নামে দুই বছর আগে প্রতারিত এক মেয়ের মা এই ‘বাজারের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দালালদেরও ছাড় না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। দালালরা উন্নত জীবন, দামি বাড়ি-গাড়ি ও প্রাচুর্যের লোভ দেখিয়ে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের প্রতারিত করে বলেও অভিযোগ তার।
“কোনো মেয়েকে হায়দ্রাবাদের বাইরে পাঠানো উচিত নয়। আমি জানি মায়েদের ব্যাথা কেমন হয়। আমার মেয়ে ভয়াবহ কষ্ট সহ্য করেছে। কোনো দালালকে ছাড় দেওয়া যাবে না, তারা আপনাকে প্রলুব্ধ করবে ও ফাঁদে ফেলবে। দয়া করে কম বয়সী মেয়েদের এভাবে বাইরে পাচারের হাত থেকে বাঁচান,” আকুতি ওই মায়ের।
ওমানে নয় মাসের কষ্টকর জীবন শেষে দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তার মেয়ে। যে স্বামী তাকে ‘আরামদায়ক জীবনের’ স্বপ্ন দেখিয়েছিল সে নিজেও ওমানে ‘দিন এনে দিন খেত’বলে জানান তিনি।
হায়দ্রাবাদের পুলিশ কমিশনার মাহেন্দর রেড্ডি বলেন, এসব ক্ষেত্রে নজরদারির পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও বাড়ানো জরুরি।
“দুর্ভাগ্যের শিকার মেয়েরা যখন উপসাগরীয় দেশগুলোতে পৌঁছে যায়, তখন স্বামী ছাড়াও অন্যদের হাতেও নির্যাতিত হতে হয় তাদের,” বলেন তিনি।
মাহেন্দর জানান, এ ধরনের ঘটনায় যুক্ত ৩৫ জনের বেশি দালাল, এজেন্ট ও বিভিন্ন বাসা নজরদারির মধ্যে আছে।
বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য ১০ বছরের বেশি না হওয়া, বিদেশ থেকে আসা কারও সঙ্গে বিয়ের আগে পুলিশ কমিশনার বা সুপারিনটেন্ডেন্টের অনুমতি নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।