সেনা অভিযান বন্ধ করুন: মিয়ানমারকে জাতিসংঘ মহাসচিব

রাখাইনে সেনা অভিযান স্থগিত এবং রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

>>রয়টার্স
Published : 13 Sept 2017, 04:44 PM
Updated : 14 Sept 2017, 02:41 PM

রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে।

দেশান্তরী রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিতে তিনি সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

রাখাইনে টহলে মিয়ানমারের সৈন্য- ফাইল ছবি: রয়টার্স

দমন অভিযানের মুখে পরদিন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল। এরইমধ্যে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ধারণা।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা।

রোহিঙ্গাদের প্রতি এই সহিংসতা বন্ধের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানালেও দেশটির নেত্রী অং সান সু চি বলছেন, রাখাইনে সবাইকে রক্ষার জন্য কাজ করছেন তারা।

সন্ত্রাস নির্মূলে রাখাইনে সেনাবাহিনী এই অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে থাকা সু চি চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন শুরুর দিন সু চি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

এদিকে বুধবারই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় বসবে বলে তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তার আগে সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সামর্থ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান গুতেরেস।

শরণার্থীদের অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। গত সপ্তাহে যখন আমরা মিলিত হয়েছিলাম সে সময় এক লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। এই সংখ্যা এখন তিনগুণ হয়ে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার হয়েছে।

“অনেকে তাঁবু দিয়ে অস্থায়ী ঘর করে বা নিজেদের যা আছে তাই নিয়ে উদারতার সঙ্গে পাশে দাঁড়ানো স্থানীয়দের সঙ্গে তারা থাকছেন। কিন্তু নারী ও শিশুরা আসছে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিয়ে।”

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা জানতে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা মঙ্গলবার টেকনাফের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।

এই সংকটকে জাতিগত নির্মূল বলা যায়  কি না প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, “জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গাদের) এক তৃতীয়াংশকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে-এটাকে বোঝানোর জন্য আপনি কি আর কোনো ভালো শব্দ পাবেন?”

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আমি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি সেনা অভিযান স্থগিত, সহিংসতা বন্ধ, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা এবং যারা দেশত্যাগ করেছে তাদের ফেরার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”