ইরমায় বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরছে ফ্লোরিডাবাসী

হারিকেন ইরমার ধাক্কা সামলে বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 06:10 AM
Updated : 12 Sept 2017, 07:12 AM

ফ্লোরিডার অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দাকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেলে রেখে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের আরও ভেতর দিকে এগিয়ে গেছে শক্তি হারিয়ে ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হওয়া ইরমা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর তাণ্ডবে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বিদুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। ঝড়টির প্রভাবে ফ্লোরিডার অরলান্ডো থেকে জ্যাকসনভিল, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের উপকূল থেকে সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের শহরগুলোর অসংখ্য সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

মৌসুমী ঝড়ে পরিণত হওয়ার আগে ইরমা গত এক শতাব্দিতে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন ছিল; কিউবায় আঘাত হেনে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়া ইরাম রোববার ‘ফ্লোরিডা কি’ নামে পরিচিতি ফ্লোরিডা উপকূলের বিভিন্ন দ্বীপে আঘাত হানে।

এরপর ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তর দিক বরাবর এগিয়ে গিয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। এর তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় জনবহুল রাজ্য ফ্লোরিডার অনেক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট জানিয়েছেন, চার মাত্রার ঝড় হিসেবে আঘাত হানা ইরমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ফ্লোরিডা কি দ্বীপপুঞ্জ এবং সেখানকার রিসর্টগুলোর। 

“সেগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, আমরা যা দেখেছি তা ভীতিকর,” সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেন গভর্নর। ঝড়ের ধাক্কায় দ্বীপগুলোতে অবস্থানরত প্রায় প্রতিটি মোবাইল-হোম উল্টে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

ঝড় চলে যাওয়ার পরও দ্বীপগুলোর স্থানীয়দের বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরতে অনুমতি না দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কমবেশি প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা এখনো দ্বীপগুলোতে অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে, তাদেরকেও সরিয়ে নিতে হবে।

ওই দ্বীপগুলো কবে পর্যটক ও বাসিন্দাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি।

ইরমার সবেচেয়ে মারাত্মক আঘাতের সাক্ষী না হলেও মিয়ামি শহরকেও ইরামার মাশুল গুনতে হয়েছে। ব্যাপক বন্যার পাশাপাশি শহরের লিটল হাইতি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা ধ্বংসস্তুপের সারি ধরে বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফেরা শুরু করেছে।

ঝড়ের সময় কাছাকাছি চার্চে আশ্রয় নেওয়া এই এলাকার বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী মেলিদা হার্নান্দেজ বলেন,“আমি কাঁদতে চেয়েছি, কিন্তু সত্যি হচ্ছে এটাই জীবন।”

ঝড়ে গাছ পড়ে তার বসতবাড়ি দুই টুকরো হয়ে গেছে।

সোমবার উত্তরপূর্ব ফ্লোরিডার অনেক এলাকায়ও বন্যার খবর পাওয়া গেছে।

জ্যাকসনভিলের পুলিশ কোমর সমান উচ্চতার পানি থেকে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করছে। ১৮৪৬ সালের পর সেইন্ট জোনস নদীর পানির উচ্চতা এবার সবচেয়ে বেশি হয়েছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

“ভেতরে থাকো, উপরের দিকে যাও, বাইরে নয়। পুরো শহরজুড়ে বন্যা বিস্তৃত হয়েছে,” শহর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে এমনভাবেই বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। সাপ এবং কুমির শহরে ছড়িয়ে পড়তে পারে সতর্ক করে বাসিন্দাদের সাবধান থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। 

সোমবার সন্ধ্যার আগেই ফ্লোরিডা ন্যাশনাল গার্ড ও স্থানীয় দমকল কর্মীরা পশ্চিম অরলান্ডোর ডজনের বেশি বাড়ি থেকে দেড়শ বন্যাক্রান্তকে উদ্ধার করে বড় ট্রাক ও উদ্ধারকারী লঞ্চের সাহায্যে আশ্রয় কেন্দ্র এবং উচু এলাকায় পাঠিয়েছে।

দিনের শেষভাগে ইরমা ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে জর্জিয়া অতিক্রম করার সময় ঝড়ো বাতাসে সৃষ্ট বন্যা ব্রান্সজউইক থেকে সাভানা ও সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

চার্লসটনে বড় বড় ঢেউ সমুদ্রতীরের দেয়ালগুলোতে আছড়ে পড়ছে; নিচুঁ এলাকার রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। 

রয়টার্স বলছে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে ইরমার তাণ্ডবলীলার তুলনায় ফ্লোরিডা এবং আশপাশের এলাকার ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে।

সপ্তাহখানেক আগে পাঁচ মাত্রার ঝড় হিসেবে আছড়ে পড়ার পর একের পর এক দ্বীপকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে এগিয়েছে এই শক্তিশালী হারিকেন, প্রাণ নিয়েছে অন্তত ৪০ জনের। 

ফ্লোরিডার আগে সর্বশেষ আঘাত হানা কিউবাতেই মারা যায় ১০ জন। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নগন্য; শেষ খবর পর্যন্ত চার জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। 

ফ্লোরিডা রাজ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের আগে ৬৫ লাখ লোককে বাড়িঘর ছেড়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়; দুই লাখেরও বেশি লোককে ৭০০ আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়।