‘ভগ্নি, তোমার নীরবতার দাম বড় বেশি’

নীরবতা ভেঙে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের নেত্রী নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2017, 06:05 AM
Updated : 10 Sept 2017, 03:42 AM

নোবেল বিজয়ী এই সাবেক ধর্মযাজক বৃহস্পতিবার এক খোলা চিঠিতে বলেছেন, “বার্ধক্য আমাকে গ্রাস করেছে, আমি এখন জরাগ্রস্ত, সব কিছু থেকে অবসর নিয়েছি। ঠিক করেছিলাম, সার্বজনীন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আর কিছু বলব না। কিন্তু আজ তোমার দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের গভীর সঙ্কটে সেই নীরবতা আমি ভাঙছি।”

৮৫ বছর বয়সী টুটু দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে সব কিছু থেকে দূরে রেখেছেন। সাবেক এই আর্চ বিশপ প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছেন প্রায় দুই দশক ধরে।

সু চির উদ্দেশে টুটু লিখেছেন, “হে আমার ভগ্নি: মিয়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোই যদি তোমার নীরবতার কারণ হয়ে থাকে, তার জন্য সত্যিই বড় বেশি দাম দিতে হচ্ছে... আমরা প্রাথর্না করি, তুমি ন্যায়বিচারের পক্ষে মুখ খোল, মানবতার পক্ষে কথা বল, দেশের মানুষের ঐক্যের কথা বল। আমরা প্রার্থনা করি, যাতে তুমি হস্তক্ষেপ কর।”   

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে নীরবতার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে সু চির কড়া সমালোচনা হচ্ছে, এমনকি তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবিও কেউ কেউ তুলছেন।

গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হওয়ায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

২০০৩ সালে ইয়াংগুন সফরে সু চির সঙ্গে টুটু

মিয়্নামারে ১০ লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা মূলত থাকেন রাখাইন প্রদেশে; ১৪ হাজার বর্গমাইলের এই রাজ্যে তাদের জনসংখ্যার হার ৪২ শতাংশ। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে মানতে রাজি নয়।

গণতন্ত্রের আন্দোলনে ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সু চির দল এখন মিয়ানমারের ক্ষমতায়। কিন্তু রাখাইনে চলমান সহিংসতার জন্য মুসলিম বিশ্বের তীব্র সমালোচনা সইতে হচ্ছে তাকে।  

দুদিন আগে এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রসঙ্গ উহ্য রাখেন।

তিনি বলেন, “আমাদের নাগরিকদের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে, আমাদের দেশে যারা আছে, তারা আমাদের নাগরিক হোক বা না হোক, তাদের প্রত্যেকের দেখভাল আমাদের করতে হবে।”