ট্রাম্পের হুমকি প্রত্যাখ্যান লাতিন আমেরিকার

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার মার্কিন হুমকির জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2017, 06:12 AM
Updated : 13 August 2017, 06:12 AM

কয়েকমাস ধরে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপক সমালোচনা করে এলেও দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকি প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।

শুক্রবার হঠাৎ করেই ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন ট্রাম্প; কিন্তু এ হুমকি লাতিন আমেরিকায় প্রায় একঘরে হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট মাদুরোর জন্য খানিকটা দম ফেলার ফুরসত দেবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

মাদুরো কর্তৃক সর্বক্ষমতাধর নতুন সাংবিধানিক পরিষদ গঠন ও এর পদক্ষেপসমূহ ভেনেজুয়লার সংকটকে পূর্ণতা দিয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই বামপন্থি মাদুরো সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে ভাষ্য সমালোচকদের।

দেশটির সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের জেরে শুক্রবার ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে পেরু। কিন্তু এর পরপরই দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো লুনা ট্রাম্পের হুমকির সমালোচনা করেন। বলেছেন, সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি জাতিসংঘের নীতিবিরুদ্ধ।

পরে মেক্সিকো ও কলম্বিয়াও আলাদা বিবৃতি দিয়ে পেরুর অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানায়।

আঞ্চলিক জোট মার্কোসুরও ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপের হুমকি প্রত্যাখ্যান করেছে। মাত্র গত সপ্তাহেই জোটটি ভেনেজুয়েলার সদস্যপদ স্থগিত করেছে। তারপরও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি তারা প্রত্যাখ্যান করছে বলে জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো শুক্রবার দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের হুমকিকে ‘পাগলামি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

শনিবার তথ্যমন্ত্রী ভ্লাদিমির ভিলেগেস টুইটারে মেশিনগান ধরে থাকা স্ট্যাচু অব লিবার্টির এক ছবি পোস্ট করেছেন; সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন এক নিবন্ধ, যার শিরোনাম- ‘দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা’।

একইদিন ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ আরিয়েজা বলেছেন, তার দেশ ‘শত্রুর’ হুমকির পরোয়া করে না। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে এক হতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

“শক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের যেসব দেশের সরকার অবস্থান নিয়েছে এবং আমাদের প্রতি সংহতি জানিয়েছে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এদের মধ্যে এমন দেশও আছে যারা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার বিরোধী, তারপরও তারা মার্কিনে প্রেসিডেন্টের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে,” এক বিবৃতিতে বলেছেন তিনি।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ভেনেজুয়েলার মাদুরো সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচক পেরুকে উদ্দেশ্য করে আরিয়েজারের এই বক্তব্য এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে সামরিক বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এমন আগ্রাসী মন্তব্য মাদুরোর সমালোচকদেরও বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে।

তারা না পারছেন ভেনেজুয়েলায় বিদেশি আক্রমণের পক্ষাবলম্বন করতে, না পারছেন মাদুরোর পাশে দাঁড়াতে, নিজেরাই একসময় যাকে ‘একনায়ক’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

ভেনেজুয়েলার যে সাংবিধানিক পরিষদ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে তারা গত সপ্তাহে সরকারবিরোধী এক প্রধান কৌঁসুলিকে বরখাস্ত করেছে।

‘সর্বময় ক্ষমতার’ অধিকারী এই পরিষদ রোববার সর্বসম্মতক্রমে নেওয়া এক সিদ্ধান্তে ডিসেম্বরের গভর্নর নির্বাচন দু মাস এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা নিয়ে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক এ প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স রোববার থেকে ওই অঞ্চলটি সফর শুরু করছেন। এবারের সফরে কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, চিলি ও পানামায় যাওয়ার কথা আছে পেন্সের।