শনিবার ভর্জিনিয়ার শার্লটসভিলে এ সহিংসতায় আরও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চারলটসভিলের ইমানসিপেশন পার্ক থেকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালীন একজন জেনারেলের ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতা করে ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়েছিল।
১৮৬১ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধে দাসপ্রথার পক্ষে ‘কনফেডারেট’ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেল রবার্ট ই লি এর ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকালে সমবেত হন তারা। কনফেডারেট পতাকা নিয়ে নাৎসি আমলের নানা স্লোগান সহকারে পার্কের ওই ভাস্কর্য অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সময় অনেকের মাথায় হেলমেট ও হাতে ঢাল দেখা যায়।
দুপক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলার পর উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় পার্কটি থেকে দুই ব্লক দূরে বিরোধীদের ভিড়ে একটি চলন্ত গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে ৩২ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রূপালি রঙের সেডান গাড়িটি দ্রুতবেগে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে আবার যে পথ ধরে এসেছিল সেদিক দিয়েই পিছিয়ে দ্রুতবেগে চলে যায়।
সোস্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিও ও রয়টার্সের আলোকচিত্রে দেখা যায়, গাড়ির ধাক্কায় উড়ে গিয়ে পড়েন কয়েকজন।
সেখান থেকে আহত ২০ জনকে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া হেলথ সিস্টেমসে নেওয়া হয়। তাদেরই একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের একজন মুখপাত্র জানান।
গাড়ির আঘাতে আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা সঙ্কটজনক এবং চারজনের আঘাত গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গাড়ির ঘটনায় ওহাইও থেকে আসা এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলবেমার্লে শার্লটসভিল আঞ্চলিক কারা কর্মকর্তা মার্টিন কুমের।
সন্দেহভাজনের নাম জেমস অ্যালেক্স ফিল্ডস্। ২০ বছর বয়সী এই শ্বেতাঙ্গ যুবক শার্লটসভিলে কী করছিলেন তা পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন কুমের।
সংঘর্ষ চলার সময় ওই এলাকা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পুলিশের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভার্জিনিয়া পুলিশের দুই সদস্য নিহত হন। হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ পরিষ্কার হয়নি।
সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে চারলটসভিলের মেয়র মাইক সিঙ্গার বলেছেন, “এখানে একজনের প্রাণ যাওয়ায় আমি মর্মাহত। শুভ বোধসম্পন্ন সবার প্রতি আমি ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভাইস মেয়র ওয়েস বেলামি সিএনএনকে বলেন, “ঈশ্বর আমাদের সহায়তা করুন-আমি সেই প্রার্থনা করছি। যা ঘটছে আমরা তেমনটি নই।”
চারলটসভিলের ঘটনার প্রতি নিবিড়ভাবে নজর রাখার কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিদ্বেষ, গোঁড়ামি ও সহিংসতার এই কুখ্যাত প্রদর্শনীর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্প বা বারাক ওবামার সময়ে নয়, দীর্ঘ কাল ধরে এটা আমাদের দেশে ঘটছে; কিন্তু আমেরিকায় এর কোনো স্থান নেই।”
সব ধরনের বিদ্বেষকে সরিয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন সবাই মিলে একতাবদ্ধ হই।”
শ্বেতাঙ্গদের বিরোধিতাকারীদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়া শিকুয়ান রাহ (২১) বিবিসিকে বলেন, উগ্র-ডানপন্থি ওই গ্রুপগুলোর কোনো বক্তব্য নেই।
“তাদের বার্তা হল- ঘৃণা ও সহিংসতা। আমরা একটি আদর্শের যুদ্ধের মধ্যে আছি।”
শ্বেতাঙ্গদের এই বিক্ষোভের সমালোচনা আগেই করেন চারলটসভিলের মেয়র সিঙ্গার; একে ‘ঘৃণা, গোঁড়ামি, বর্ণবাদী ও অসহনশীলতার প্রদর্শনী’ আখ্যায়িত করেন তিনি।
১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধ হয় ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারি বাহিনী ও দক্ষিণাঞ্চলীয় ১১টি স্টেটের কনফেডারেট বাহিনীর মধ্যে। দাসপ্রথার পক্ষের কনফেডারেট বাহিনী কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়, ঘটে দাসপ্রথার বিলুপ্তি।
এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক শহরে কনফেডারেট প্রতীকগুলো ধরে রাখা হয়, যা এখনও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কনফেডারেট পতাকা এবং ভাস্কর্যগুলো ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে উগ্র ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো। তাদের ভাষ্যমতে, এসব প্রতীক স্বাধীনতা ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির কথা বোঝায়।
অপরদিকে ‘এগুলোর মূলে দাসপ্রথা’ রয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের।
মুক্তমনাদের শহর হিসেবে পরিচিত শারলটসভিলে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ৮৬ শতাংশ ভোট ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে পড়েছিল। ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উগ্র ডানপন্থিরা চাঙা হয়ে উঠেছেন বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।