জাকির নায়েককে সৌদির ‘নাগরিকত্ব’

সন্ত্রাসবাদে উস্কানির অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা বিতর্কিত টিভি বক্তা জাকির নায়েককে সৌদি আরব নাগরিকত্ব দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে মিডল ইস্ট মনিটর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 08:29 PM
Updated : 19 May 2017, 09:29 PM

সূত্রের বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারী এই সংস্থা বলছে, জাকির নায়েককে ইন্টারপোল যাতে গ্রেপ্তার করতে না পারে সেজন্য সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ তার নাগরিকত্ব অনুমোদন করেন।

ঢাকার গুলশানে গতবছর জুলাইয়ে জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুজন জাকির নায়েকের মতো ইসলামী বক্তাদের অনুসরণ করতেন বলে অভিযোগ ওঠার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন মহারাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই টিভি বক্তা।

উগ্রবাদী বক্তব্য প্রচারসহ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে ওই সময় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ভারত সরকার। সে সময় সৌদি আরবে থাকা জাকির নায়েক আর ভারতে ফেরেননি।

জাকির নায়েকের কিছু বক্তব্যকে জঙ্গিবাদের প্রতি তার সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করেন অনেকে; তরুণদের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে ভেড়ানোর অভিযোগে তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ।

ভারতের কয়েকজন মুসলমান পণ্ডিত জাকির নায়েককে ‘সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ওহাবি মতবাদ প্রচারকারী’ হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখেন। অন্যদিকে সৌদি আরব সরকার তাকে ‘ইসলামের সেবক’ বিবেচনা করে ২০১৫ সালে ‘বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ দেয়।

মিডল ইস্ট মনিটর বলছে, ভারতের একটি আদালত মুদ্রা পাচারের এক মামলায় গত মাসে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সে সময় মালয়েশিয়া সফরে ছিলেন ৫১ বছর বয়সী এই টিভি বক্তা। পাঁচ বছর আগে মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে তাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেয়।

জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, তার পাসপোর্ট প্রত্যাহার এবং তাকে ধরার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া পিস টিভির কার্যক্রম চলে জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন-আইআরএফ এর তত্ত্বাবধানে।

আইআরএফ ও নায়েকের পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে ‘অবৈধভাবে আসা’ ২০০ কোটি রুপি লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানায় ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের এনফোর্সমেন্ট অধিদপ্তর।

জাকির নায়েক বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে এনজিওর অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর করতেন বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সন্দেহ। এসব বিষয় অনুসন্ধানে উঠে আসার পর গত ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর কয়েক দফা তলবে হাজির না হওয়ায় গত মাসে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগেরও তদন্ত করছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। ওই অভিযোগে এনআইএ-এর তলবেও সাড়া দেননি বিতর্কিত এই বক্তা।

চিকিৎসা শাস্ত্রে লেখাপড়া করা নায়েক বিভিন্ন সময়ে ইসলাম ধর্ম, জঙ্গিবাদ, জিহাদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন; নিষিদ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন দেশে।

গত বছর উসকানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগে ভারতের কর্নাটক রাজ্যে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়৷ আর গুলশানের খুনিদের আগ্রহের বিষয়টি উঠে আসার পর শুরু হয় নতুন তদন্ত।

১৯৬৫ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া জাকির নায়েক কিষানচাঁদ চেলারাম কলেজের পর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিষয়ে লেখাপড়া করেন। পরে বিওয়াইএল নায়ার চ্যারিটেবল হাসপাতালেও তিনি লেখাপড়া করেন।

১৯৮৭ সালে ইসলামী বক্তা আহমেদ দিদাতের সংস্পর্শে আসেন নায়েক। এর কয়েকবছর বাদে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করেন ধর্ম প্রচারের কাজ।

ভারতের আল্লামা সাইয়্যিদ খালিক সাজিদ বোখারী কয়েক বছর আগে জাকির নায়েকের বিপক্ষে একটি বই লেখার পর বাংলাদেশেও হক্কানি আলেমরা তার সমালোচনায় মুখর হন।