মসুলে তীব্র লড়াই, বিমান হামলায় মরছে বেসামরিক মানুষ

ইরাকি বাহিনী যতই পশ্চিম মসুলের কেন্দ্রস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তাদের লড়াই ততই তীব্র হয়ে উঠছে, পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

>>রয়টার্স
Published : 19 March 2017, 09:48 AM
Updated : 19 March 2017, 09:49 AM

গত সপ্তাহে মাঝামাঝি শহরটির আইএস-নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় ২১ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

৪০ বছর বয়সী শ্রমিক শিহাব আয়েদ জানিয়েছেন, আইএসের যোদ্ধারা তাদের বাড়িতে ও সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে গুলিবর্ষণ করছিল আর তারা বাড়ির ভিতরে লুকিয়ে ছিলেন, ১৫ মিনিট পর তাদের বাড়ির ওপর বিমান হামলা হয়।

“দুটি বিমান হামলায় তিনটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়,” বলেন তিনি। 

এ দুটি হামলায় আয়েদের স্ত্রী, তিন মেয়ে ও সাড়ে তিন বছর বয়সী একমাত্র ছেলে নিহত হন। এ দুটি হামলায় নিহত প্রায় ১৫ জনকে পাঁচটি ঠেলাগাড়িতে তুলে কবর দিতে নিয়ে যান আয়েদ ও তার প্রতিবেশীরা।

কান্নারত আয়েদ বলেন, “ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশগুলো টেনে বের করি আমরা। এখন তাদের কবর দিতে যাচ্ছি।”

মসুলের আরেক এলাকার বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বলেন, “কোনো বাড়িতে আইএসের কোনো লক্ষ্যভেদীকে যখইন দেখবে জোট বাহিনী, এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাড়িটিতে বিমান হামলা হবে।

মুসলের বেসামরিক লোকজনের বাড়িতে ও সংলগ্ন গলিগুলোতে অবস্থান নিয়ে আইএস জঙ্গিরা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে; ১৬ মার্চ, ২০১৭। রয়টার্স

“কিন্তু দায়েশের (আইএস) জঙ্গিদের মারতে পারে না তারা। ওই সময়ের মধ্যেই ওরা অবস্থান পরিবর্তন করে, আর বিমান হামলায় মারা যায় সাধারণ মানুষ।”

আইএসের যোদ্ধারা পশ্চিম মসুলের পুরনো শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাড়ি ও গলিগুলোতে অবস্থান নিয়ে ইরাকি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। স্থল বাহিনীকে সমর্থন দিতে ইরাকি সামরিক বাহিনীর গোলন্দাজ ইউনিট ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীরা বিমানগুলো আইএস অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও বোমাবর্ষণ করছে। এতে নিহত বেসামরিকদের লাশের স্তূপ ভারী হয়ে উঠছে।

অক্টোবরে ইরাকি সরকারি বাহিনী মসুল অভিযান শুরু করার পর থেকেই আইএসের জঙ্গিরা আক্রমণ প্রতিরোধে আত্মঘাতী গাড়িবোমা ও লক্ষ্যভেদীদের শরণ নিচ্ছে। বেসামরিক লোকদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে বাছবিচার ছাড়াই সৈন্য ও বেসামরিকদের ওপর বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করছে।

এরমধ্যে সরকারি বাহিনীও পুরনো শহর লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে গুলিবর্ষণ ও শহরের বাইরের গোলন্দাজ অবস্থানগুলোতে থেকে গ্রাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। 

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মসুলের পূর্বাংশ পুনরুদ্ধারের চেয়ে পশ্চিমাংশ পুনরুদ্ধারের লড়াই বেসমরিকদের জন্য বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। ইরাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন অভিজাত ইউনিটগুলো পশ্চিম মসুলে সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ না করেই রকেট নিক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।  

বিমান হামলায় নিহত স্বজনদের লাশ কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্য ও প্রতিবেশীরা; ১৭ মার্চ, ২০১৭। রয়টার্স

পৃথকভাবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিমান হামলায় বেসামরিক নিহত হওয়ার অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছে তারা।

এ পর্যন্ত মুসলের লড়াইয়ে কতোজন বেসামরিক নিহত হয়েছেন তার পরিষ্কার কোনো সংখ্যা জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনী নিহতের বিভিন্ন সংখ্যা জানিয়েছে। 

চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া তাদের আইএস বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ২২০ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। 

অপরদিকে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদিকদের পরিচালিত প্রজেক্ট এয়ারওয়্যারস জানিয়েছে, চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহে মসুল অভিযানে নিহত বেসামরিক লোকজনসহ ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় ২,৫৯০ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন।