ডিলানকে ছাড়াই আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে চলতি বছর নোবেল বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হলো পুরস্কারের পদক ও অর্থের চেক।
প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ীকে পদক ও সনদপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার।
বিবিসি বলছে, অনুষ্ঠানে ডিলানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
লিখিত বক্তব্যে ডিলান এই পুরস্কার পাওয়াকে “চাঁদে দাঁড়ানোর” সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সশরীরে না থাকলেও মানসিকভাবে অনুষ্ঠানে তিনি রয়েছেন জানিয়ে, তার গান বা গীতিগুলোকে সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করার জন্য সুইডিশ একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে ডিলানের ‘অ্যা হার্ড রেইনস গোনা ফল’ গানটি তার পক্ষে পরিবেশন করেন তার বন্ধু প্যাটি স্মিথ।
কিন্তু গানটি পরিবেশনের সময় নার্ভাস হয়ে পড়েন তিনি। এরফলে গানের কথা তিনি ভুলে যান।
তিনি বলেন, “দুঃখিত, আমরা কি এই পর্বটি বন্ধ করে দিতে পারি?” আগত দর্শকেরা তখন হাততালি দিয়ে উঠলে তিনি বলেন, “আমি ক্ষমাপ্রার্থী, আমি খুব নার্ভাস বোধ করছি।”
অনুষ্ঠানে ডিলানের পক্ষে তার বক্তব্য পাঠ করে শোনান সুইডেনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আযিতা রাজি। ডিলান বলেন, নোবেল বিজয়ী লেখকদের ‘বিরল সান্নিধ্যে’ অন্তর্ভুক্ত হলেন তিনি।
তিনি বলেন, অল্প বয়সে তিনি সাহিত্যের মহারথী নোবেলজয়ী কিপলিং, শ, টমাস মান, পার্ল বাক এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো লেখকদের লেখা পড়েছেন।
কিন্তু তাদের নামের তালিকায় নিজে যুক্ত হওয়ার অনুভূতি সত্যি “ভাষাতীত”–বলেন ডিলান।
লিখিত বক্তব্যে ডিলান বলেন, “যদি আমাকে কখনো কেউ বলত, নোবেল পাওয়ার সুপ্ত সম্ভাবনা আমার আছে, আমার কাছে সেটা অনেকটা চাঁদে দাঁড়িয়ে থাকার মতোই মনে হতো।”
তার পুরস্কার জয় বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। কেননা, তিনি বই কিংবা কবিতা নয়, গান লিখতেন।
ডিলান বলেন, “কখনো নিজেকে প্রশ্ন করার সময় হয়নি, ‘আমার গানগুলো কি সাহিত্য?”
নৈশভোজে অংশ নেওয়া সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই প্রশ্নের ‘চমৎকার উত্তর’ দেওয়ার জন্য পুরস্কার প্রদান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।”
উইলিয়াম শেক্সপিয়রকে একজন মহান সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে ডিলান বলেন, তিনি সম্ভবত নিজেকে একজন নাট্যকার বলেই মনে করতেন।
“তিনি সাহিত্য রচনা করছেন এটা কখনো তার মাথায় আসতো না। তার শব্দ লেখা হয়েছে মঞ্চের জন্য, অর্থাৎ বলার জন্য, পড়ার জন্য নয়।”-বলেন ডিলান।
গেল ১৩ অক্টোবর সাহিত্যে ১১৩তম নোবেল বিজয়ী হিসেবে ডিলানের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেলের ১১২ বছরের ইতিহাসে এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সংগীত শিল্পী ও গীতিকার তিনি।
১৯৯৩ সালে ঔপন্যাসিক টনি মরিসনের পর বব ডিলান প্রথম আমেরিকান, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন।
গেল ১৬ নভেম্বর তিনি রয়্যাল সুইডিশ একাডেমিতে চিঠি পাঠিয়ে পুরস্কার নিতে অসামর্থে্যর কথা জানান। ‘ব্যক্তিগত’ ওই চিঠিতে তিনি ডিসেম্বরে সুইডেন না যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘পূর্ব প্রতিশ্রুত একটি অনুষ্ঠানের’ কথা উল্লেখ করেন।