ফিদেল কাস্ত্রো: ঝঞ্ঝাময় বর্ণিল এক জীবন

‘ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে’- সংগ্রামী জীবনের শুরুতে ব‌্যর্থ অভ‌্যূত্থানের পর বিচারের সম্মুখীন হয়ে বলেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। তারপর ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের দোরগোড়ায় একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তা টিকিয়েও রাখেন তিনি।

সুলাইমান নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2016, 08:34 AM
Updated : 26 Nov 2016, 09:20 AM

স্বচ্ছল পরিবার থেকে আইনজীবী হয়ে সহজ জীবন কাটানোর পথ সরিয়ে রেখে ঝঞ্ঝামুখর এক বর্ণিল জীবন পেরিয়ে ৯০ বছর বয়সে শনিবার জীবনাবসান ঘটল ফিদেল কাস্ত্রোর।

কিউবার স্পেনিশ বংশোদ্ভূত একটি পরিবার থেকে কীভাবে ফিদেল হয়ে উঠলেন বিশ্বের মুক্তিকামীদের নেতা?

অগাস্ট ১৩, ১৯২৬: কিউবার পূর্বাঞ্চলীয় বিরানে স্পেনিশ বংশোদ্ভূত একটি স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম ফিদেলের।

জুলাই ২৬, ১৯৫৩: কিউবার সামরিক একনায়ক বাতিস্তার বিরুদ্ধে একটি ব‌্যর্থ সামরিক অভ‌্যূত্থানে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ধরা পড়েন।

মে, ১৯৫৫: ‘ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে’- বিচারে নিজের সম্পর্কে এ বক্তব‌্য দেওয়ার পর কাস্ত্রোকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তিনি মেক্সিকো চলে যান।

ডিসেম্বর ২, ১৯৫৬: ৮১ জন সঙ্গী নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় কিউবায় পদার্পণ করে নাস্তানাবুদ হন। ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বেঁচে যান ভাই রাউল কাস্ত্রো, বন্ধু আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গেভারাসহ ১২ জন। তারা পরে সিয়েরা মায়াস্ত্রো পার্বত‌্যাঞ্চলে সংগঠিত হয়ে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন।

জানুয়ারি ১, ১৯৫৯: বাতিস্তা ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে পালিয়ে যান।

জানুয়ারি ৮, ১৯৫৯: কিউবাজুড়ে বিজয়যাত্রা শেষে কাস্ত্রো হাভানায় প্রবেশ করেন। সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডেন্ট হিসাবে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেন। কৃষি সংস্কার এবং অধিকাংশ দেশি-বিদেশি ব‌্যবসা জাতীয়করণের সূচনা করেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯: কিউবার প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন কাস্ত্রো।

 

৩ জানুয়ারি ১৯৬১: হাভানার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র।

১৬ এপ্রিল, ১৯৬১: কাস্ত্রো তার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘোষণা করেন।

এপ্রিল ১৯, ১৯৬১: যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট নির্বাসিত কিউবানদের আক্রমণ প্রতিহতে সেনাদের নির্দেশনা দেন কাস্ত্রো।

ফেব্রুয়ারি ৭, ১৯৬২: কিউবার উপর জাতিসংঘ পূর্ণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অক্টোবর, ১৯৬২: মিসাইল সংকট। কিউবায় সোভিয়েত টর্পেডোর উপস্থিতি মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ‌্যকার অচলাবস্থা উস্কে দেয়। অনেকেই পরমাণু ‍যুদ্ধের আশংকা করে। তবে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নৌ-অবরোধ আরোপ করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন মিসাইল প্রত‌্যাহারের ঘোষণা দেয়।

অক্টোবর, ১৯৬৫: কিউবান কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের পর তিনি প্রথম সাধারণ সম্পাদক হন। বামপন্থি সরকারের প্রতি সমর্থন জানাতে কাস্ত্রো চিলি, পানামা, নিকারাগুয়া সফর করেন।

১৯৭৫: দক্ষিণ আফ্রিকা মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধে বামপন্থি সরকারকে সহযোগিতা করতে কাস্ত্রো অ‌্যাঙ্গোলায় সেনা পাঠান।

১৯৭৬: নবগঠিত ন‌্যাশনাল এসেম্বলির অনুমোদনে কাস্ত্রো প্রেসিডেন্ট হন। ‍

১৯৮০: প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কিউবানকে দেশত‌্যাগে অনুমতি দেওয়া হয়, যাদের অধিকাংশ মেরিয়েল বন্দরের মাধ‌্যমে দেশত‌্যাগ করে।

১৯৯১: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কিউবাকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে।

 

অগাস্ট ১৪, ১৯৯৩: মার্কিন ডলার ব‌্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রত‌্যাহার করে কাস্ত্রো সরকার। এটা সীমিত পরিসরে অর্থনীতির দ্বার খুলে দেওয়ার ধারাবাহিক কর্মসূচির একটি, তবে তা বিপ্লব সুরক্ষার জন‌্য করা হচ্ছে বলে সরকার জানায়।

অগাস্ট ৫, ১৯৯৪: বিপ্লবের পর কাস্ত্রোবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে শত শত হাভানাবাসী।

অগাস্ট-সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪:  ফি বছর ২০ হাজার কিউবানকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা প্রদান সংক্রান্ত দ্বি-পক্ষীয় চুক্তির সুবিধা নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সঙ্কট চলাকালে নৌপথে ৩৫ হাজারেরও বেশি কিউবান দেশত‌্যাগ করে।

ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৯৬: কিউবান মিগ ফাইটাররা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ছোট বিমান ভূপাতিত করে, যাতে চার ক্রু নিহত হয়।

জানুয়ারি ২১-২৫, ১৯৯৮: পোপ জন পলকে তার প্রথম সফরে স্বাগত জানান কাস্ত্রো।

 

নভেম্বর ২৫, ১৯৯৯:  জুন ২৮, ২০০০: যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় জাহাজডুবিতে মায়ের মৃত‌্যুর পর ৬ বছর বয়সী কিউবান শিশু এলিয়ানকে দেশে ফেরাতে কাস্ত্রো ব‌্যাপক প্রচার শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ওই শিশু কিউবায় ফেরে।

জুন ১২, ২০০২: ভিন্ন মতাবলম্বী ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবেলায় এক মিলিয়ন কিউবানকে নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন কাস্ত্রো।

জুন ২৬, ২০০২:  ন‌্যাশনার এসেম্বলিতে সংবিধান সংশোধন করে সমাজতন্ত্রকে স্থায়ী বলে ঘোষণা করে কিউবা।

 

মার্চ ১৮, ২০০৩: ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন শুরু করেন কাস্ত্রো। গণতন্ত্রকামী ৭৫ কর্মী এবং সাংবাদিকের কারাদণ্ড হয়, আন্তর্জাতিকভাবে যার সমালোচনা হয়।

২৪ অক্টোবর, ২০০৪: সান্তা ক্লারায় ভাষণ দেওয়ার সময় পড়ে বাম হাঁটু ভেঙে ফেলেন ফিদেল কাস্ত্রো।

৩১ জুলাই, ২০০৬: অজ্ঞাত রোগে অভ‌্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ থামাতে আকস্মিক সার্জারি চলাকালে কাস্ত্রো ভাই রাউলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮: রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আর না ফেরার ঘোষণা দেন তিনি।

[রয়টার্স অবলম্বনে]