মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) ফুকুশিমা, মিয়াগি, চিবা, আমোরি, আওতে, ইবারাকি প্রদেশ এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তর ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৯। তবে জাপানের আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭.৪ মাত্রার কথা বলেছে।
শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পরের চার ঘণ্টায় ৪.৪ থেকে ৫.৪ মাত্রার অন্তত ১০টি পরাঘাত রেকর্ড করে ইউএসজিএস।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরপরই জাপানে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। দুই ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে সেন্দায় অঞ্চলে ১ দশমিক ৪ মিটার উচ্চতার (সাড়ে ৪ ফুট) সুনামি রেকর্ড করা হয় বলে খবর দেয় জাপান টাইমস।
দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ।
জাপান সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াসুদা সুগা সকালে টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ভূমিকম্প দুর্গত এলাকাগুলোতে।”
ভূমিকম্পের কয়েকঘণ্টা পর সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।
সাড়ে পাঁচ বছর আগে এই ফুকুশিমাতেই ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর প্রলঙ্করী সুনামিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
সেবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে অন্তত ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। বদলে ফেলে আবহাওয়া ও সুনামি সতর্কতা পদ্ধতি।
এবারের ভূমিকম্পেও ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা কেঁপে ওঠে। তবে সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে মন্ত্রীপরিষদ সচিব সুগা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় রিঅ্যাকটরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে তা ‘নিরাপত্তা সীমা’র মধ্যে থাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভূমিকম্পের সময় রাজধানী টোকিওর ১০০ কিলোমিটার দূরেও বড় ধরনের ঝাঁকুনি অনুভূত হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। কোনো কোনো এলাকায় ভবনগুলো অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে কেঁপেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
জাপানের আবহাওয়া দপ্তর এবারের ভূমিকম্পকে ২০১১ সালের ভূমিকম্পের পরাঘাত অভিহিত করেছে।
ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ‘সামান্য’ বলে জানিয়েছেন জাপানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী জুন মাতসুমতো। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পর চার ঘণ্টায় হতাহতের কোনো খবর তারা পাননি।
গত এপ্রিলে ৬ দশমিক ৫ ও ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাড়ে তিন লাখ বাসিন্দার কুমামতো প্রদেশ। ওই দুই দফাভূমিকম্পে ৪৯ জন নিহত হন। কয়েকদিন আগে নিউ জিল্যান্ডেও ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া দপ্তরের এক মুখপাত্র জাপান টাইমসকে বলেছেন, ভূমিকম্পপ্রবণ এ এলাকায় প্রতিবছর ৭ বা তার বেশি মাত্রার অন্তত একটি ভূমিকম্প হচ্ছে।