গ্যাস চুক্তি: রুশ-তুর্কি সম্পর্কে নতুন মোড়

সাগরের তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের বড় ধরনের একটি প্রকল্পের বিষয়ে চুক্তি করেছে তুরস্ক ও রাশিয়া।

>>রয়টার্স
Published : 11 Oct 2016, 05:54 AM
Updated : 11 Oct 2016, 05:54 AM

সোমবার এ চুক্তি সই করার পর সিরিয়ার যুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করারও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশ দুটি।

রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান তুরস্ক গুলি করে ভূপাতিত করার প্রায় এক বছর পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এই দুই দেশ।

ইস্তানবুলের অটোম্যান আমলের একটি প্রাসাদে সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান। দুনেতার আলোচনায় জ্বালানি চুক্তি, বাণিজ্য ও পর্যটন বিষয়ে সমঝোতা, প্রতিরক্ষা ও সিরিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গ স্থান পায়।

সিরিয়ায় রাশিয়া ও তুরস্ক পরস্পর বিপরীত দুটি পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে।

বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, “রুশ-তুর্কি সম্পর্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিপূর্ণ একটি দিন গেল আজ। রুশ-তুর্কি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে মিত্রতা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে, এ বিষয়ে পুরো আত্মবিশ্বাস আছে আমার।”

উভয় দেশের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়ায় এবং উভয়ের অর্থনীতি সঙ্কটের মধ্যে থাকা অবস্থায় নেটো সদস্য তুরস্ক ও নেটো বিরোধী রাশিয়া পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করে তুলছে। 

গেল নভেম্বরে সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তে একটি রুশ বোমারু বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল তুরস্ক। তারপর দুপক্ষের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও তুরস্কে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানান, তুর্কি থেকে আমদানি করা কিছু খাদ্যদ্রব্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা (বিমান ভূপাতিত করার পর এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল) তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে কাজ করতে তারা দুজন একমত হয়েছেন। 

তাদের সই করা তুর্কস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন চুক্তির ফলে ইউরোপের জ্বালানি (গ্যাস) বাজারে মস্কোর অবস্থান আরো দৃঢ় হবে এবং রাশিয়ার জ্বালানি ইউক্রেইন হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করার প্রধান পথটি বন্ধ করে দিতে পারবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জ্বালানির জন্য রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা হ্রাসের চেষ্টা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং ইইউ-র বিরোধিতার কারণে বুলগেরিয়া হয়ে দক্ষিণমুখি পাইপলাইন নির্মাণ বাতিল করে রাশিয়া। এর পরপরই তুর্কস্ট্রিম পরিকল্পনা তৈরি হয়।

এরদোয়ান আরো জানিয়েছেন, তুরস্কে রুশ নির্মিত একটি পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি দ্রুততর করা হবে। মাঝখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে পড়ায় ওই প্রকল্পের কাজে সময় নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি। 

২০১৩ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাতোম দুই হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে তুরস্কে চারটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের কাজের চুক্তি করে, কিন্তু রুশ বিমান ভূপাতিত করার পর ওই প্রকল্পের কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান। তারা উভয়েই সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ত্রাণ সরবরাহের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে এরদোয়ান বলেন, “এই বিষয়ে (সিরিয়া) আমরা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করেছি, বিশেষ করে আলেপ্পোতে মানবিক ত্রাণের বিষয়ে। কোন কৌশলে এগোলে আলেপ্পোর মানুষ শান্তি খুঁজে পাবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা।”

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া, অপরদিকে বাশারবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক এবং দেশটি আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়।