পোলিশ চলচ্চিত্রনির্মাতা আন্দ্রেই ভাইদার মৃত্যু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে টালমাটাল পোল‌্যাণ্ড আর কমিউনিস্ট পটভূমিতে নির্মিত ক‌্যানেল ও কাতিনের মত চলচ্চিত্রের নির্মাতা আন্দ্রেই ভাইদা আর নেই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2016, 12:00 PM
Updated : 10 Oct 2016, 01:10 PM

বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অস্কারজয়ী এই পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালকের মৃত‌্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

চলচ্চিত্র অঙ্গণে ছয় দশকের ক‌্যারিয়ারে ৪০টির বেশি কাহিনী-চিত্র নির্মাণ করেছেন ভাইদা। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অবদানের জন‌্য ২০০০ সালে তাকে সম্মানসূচক অস্কার দেওয়া হয়।

১৯২৬ সালের উত্তর-পশ্চিম পোল্যান্ডের সুভালকিতে ভাইদার জন্ম। ১৯৪০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে পোলিশ সামরিক অফিসারদের বিদ্রোহের পর কাতিন গণহত্যায় তার বাবাও নিহত হন।

বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভাইদা একসময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৩৯ সালে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।

ভাইদা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোগ দেন পোলিশ রেজিসট্যান্সে। যুদ্ধের পর চিত্রশিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেন, এরপর পোল‌্যান্ডের বিখ‌্যাত লজ ফিল্ম স্কুলে সেলুলয়েডের দীক্ষা নেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওয়ারশ শহরে জার্মান আগ্রাসন নিয়ে ১৯৫৫ সালে ওয়াজদা নির্মাণ করেন তার প্রথম কাহিনী-চিত্র ‘এ জেনারেশন’। যুদ্ধকালীন পোল্যান্ডের জীবন নিয়ে এরপর তিনি নির্মাণ করেন তার বিখ্যাত ট্রিলজি ক‌্যানেল, অ্যাশেজ ও ডায়মন্ড।

জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে ওয়ারশ শহরকে দখলমুক্ত করতে ১৯৪৪ সালে পোলিশ বাহিনীর লড়াইয়ের পটভূমিতে নির্মিত ক‌্যানেল ১৯৫৭ সালে কান উৎসবে জুরি পুরস্কার পেলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ভাইদার নাম।

ম্যান অব মার্বেল, ম্যান অব আয়রনের মত ভাইদার অধিকাংশ চলচ্চিত্রের মূল উপজীব‌্য যুদ্ধ আর যুদ্ধোত্তর পোল্যান্ডের টালমাটাল রাজনীতি। এসব সিনেমার যুদ্ধের গল্প পছন্দ না হওয়ায় পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট শাসকদের রোষের মুখেও পড়তে হয় তাকে।

কাতিনে গণহত্যা নিয়ে ‘কাতিন’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে ভাইদাকে ১৯৮৯ সালে পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নিজের জীবদ্দশায় ‘মুক্ত পোল‌্যান্ড’ দেখে যেতে পারবেন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।

ভাইদা তার শেষ চলচ্চিত্র পোভিদকি নির্মাণ করেছেন পোলিশ চিত্রকর ভাতিস্লাভ স্ট্রেমিনস্কির জীবনী নিয়ে, যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্ট্যালিনের আমলে ভুগতে হয়েছিল।

ভাইদা বলেছিলেন, শিল্পে ‘রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের’ ব্যাপারে সতর্ক করতে এ চলচ্চিত্রটি তিনি নির্মাণ করেন।

পোভিদকি ২০১৭ সালের অস্কারে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র ক‌্যাটাগরিতে লড়বে। আর ভাইদার ম্যান অব আয়রন ১৯৮১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে জিতেছিল সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার।

সিনেমা বানানো প্রসঙ্গে ভাইদা এক সময় বলেছিলেন, “সৃষ্টিকর্তা পরিচালকদের দুটো চোখ দিয়েছেন এক চোখ ক্যামেরায় রাখতে এবং অন‌্য চোখে নিজের চারপাশে নজর দেওয়ার জন‌্য।”

পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের পর ১৯৯০ সালে প্রথম স্বাধীন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের পর ভাইদা দুই বছর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।