তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থান: কে এই ফেতুল্লাহ গুলেন?

ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য স্বেচ্ছা-নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়িপ এরদোয়ান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2016, 11:26 AM
Updated : 16 July 2016, 11:26 AM

তবে গুলেনের হিজমেত আন্দোলন এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংস্রবের কথা অস্বীকার করেছে।

এ ধরনের অভিযোগকে ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, হিজমেত আন্দোলন সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে না। 

শুক্রবার রাতের ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় শনিবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত ও এক হাজার ১৫৪ জন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন সামরিক বাহিনীর প্রায় এক হাজার ৫৬৩ জন বিদ্রোহী সেনা। 

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদারকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, গুলেনের অনুসারী সৈন্যরা এই অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছিল।

ইউকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে ১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিলে জন্ম নেওয়া গুলেন একজন সাবেক ইমাম এবং লেখক। তিনি গুলেন আন্দোলনের জনক। তুরস্কে এই আন্দোলন হিজমেত আন্দোলন নামে পরিচিত।

তুর্কি শব্দ হিজমেত এর বাংলা প্রতিশব্দ জনসেবা।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেইনিয়া অঙ্গরাজ্যের সেইলর্সবার্গে বসবাসরত গুলেন ইসলামের হানাফি মাজহাবের অনুসারী।

তিনি বিজ্ঞান, আন্তঃধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন।

তুরস্কের ভবিষ্যৎ ও আধুনিক বিশ্বে ইসলাম নিয়ে তৈরি হওয়া সামাজিক বিতর্কের তিনি এক সরব বক্তা।

ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যমগুলোতে গুলেনকে ‘ইসলামের সহনশীল ধারার পক্ষপাতী’ এবং ‘কঠোর পরিশ্রম ও শিক্ষার’ অনুরাগী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাকে বিশ্বের ‘অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম ব্যক্তিত্ব’ বলে স্বীকৃতি দিয়ে ওই গণমাধ্যমগুলো।

২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মিত্র ছিলেন। কিন্তু ওই বছর তুরস্ক সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের সূত্র ধরে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। 

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জ্যেষ্ঠ সমর্থকদের বিরুদ্ধে ওই দুর্নীতির তদন্তে তার ছেলে বিলালের নামও ছিল।

এই তদন্তের জন্য পুলিশ ও বিচার বিভাগে থাকা গুলেনের অনুসারীদের দায়ী করেন এরদোয়ান ও তার দল একে পার্টি।

গুলেনপন্থি স্কুল ও হিজমেত আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করার এরদোয়ানের প্রচেষ্টার প্রতিশোধ হিসেবে ওই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয় বলে মনে করে একে পার্টি।

এই বিরোধের জেরে তুর্কি সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুলেনপন্থি বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও যাদের সঙ্গে গুলেনপন্থিদের সম্পর্ক আছে বলে খবর রটে তাদের বের করে দেয় এরদোয়ান সরকার।

বর্তমানে তুরস্কের ফেরারি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় গুলেনের নাম আছে। তুর্কি কর্মকর্তারা তাকে ‘গুলেনপন্থি সন্ত্রাসী সংস্থার’ নেতা বলে অভিহিত করে।

তুরস্কের একটি ফৌজদারি আদালত গুলেনের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে।

তুরস্ক গুলেনকে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য গুলেন বা তার কোনো অনুসারিকে অভিযুক্ত করেনি তুরস্কের কোনো আদালত।  

শুক্রবার রাতে যখন সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়ে তখন তুর্কি সরকারের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী রর্বার্ট আর্মস্টার্ডাম বলেন, “গুলেনপন্থিদের সরাসরি জড়িত থাকার ইঙ্গিত আছে।”

তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান বার বার যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে গুলেন ও তার হিজমেত আন্দোলনের ‘হুমকি’ সম্পর্কে ‘সতর্ক’ করার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছেন।

আমস্টার্ডাম বলেন, “তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করেছে, নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে গুলেন কাজ করছেন এমন ইঙ্গিত পেয়েছে তারা।”