যুক্তরাষ্ট্রে আবারো পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস এলাকায় ‘শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে’ কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হওয়ার পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

>>রয়টার্স
Published : 7 July 2016, 03:34 PM
Updated : 7 July 2016, 03:34 PM

বৃহস্পতিবার সেন্ট অ্যান্থনি পুলিশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিনেসোটার ফ্যালকন হাইটসের কাছে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে ট্রাফিক স্পটে অজ্ঞাত একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তার মৃত্যু হয়।”

নিহত ওই ব্যক্তির নাম ফিলান্ডো ক্যাস্টিল (৩২) বলে জানায় তার পরিবার।

ক্যাস্টিলকে গুলি করার পরপরই তার সঙ্গে থাকা এক নারী ফেইসবুকে সরাসরি লাইভ ভিডিওতে ‘যথাযথ কারণ ছাড়াই পুলিশ তার ছেলেবন্ধুকে গুলি করেছে’ বলে দাবি করেন।

১০ মিনিটের ওই ভিডিও ফুটেজটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ক্যাস্টিলের পরিবারের দাবি ওই নারী তার বাগদত্তা।

ক্যাস্টিলের মা ভালেরি ক্যাস্টিল সিএনএনকে বলেন, “আমি এই জীবনে একবারের জন্যও ভাবিনি আমার ছেলেকে এমন ব্যক্তিরা হত্যা করতে পারে যাদের দায়িত্ব আসলে তাকে সুরক্ষা করা ও সেবা প্রদাণ করা।”

ভালেরি তার পুত্রকে ‘আরাম প্রিয়’ কিন্তু পরিশ্রমী বলে বর্ণনা করেন। সে একটি স্কুলের ক্যাফেটেরিয়ার সুপারভাইজার ছিলেন এবং ভিডিও গেম খেলতে খুব পছন্দ করতেন।

ক্যাস্টিলের গোপনের নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি ছিল বলেও জানান তার মা।

১০ মিনিটের ওই ভিডিও ফুটেজের শুরুতে গাড়িতে যাত্রী আসনে বসা এক নারী মুহূর্ত আগে তার ছেলেবন্ধুকে গুলি করার ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন। পাশে চালকের আসনে বসা গুলিবিদ্ধ ক্যাস্টিল তখনও জীবিত ছিলেন।

ওই নারী বলেন, গাড়ির পেছন দিকের একটি লাইট ভাঙ্গা থাকার কারণে পুলিশ তার ছেলেবন্ধুকে থামতে নির্দেশ দেয়।

“সে পুলিশকে তার কাছে থাকা লাইসেন্স করা একটি বন্দুকে কথা বলেছিল। এক পর্যায়ে সে পকেট থেকে তার আইডি কার্ড ও ওয়ালেট বের করার চেষ্টা করে।”

“যেহেতু সে পুলিশকে বলেছিল তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে এবং সে তার ওয়ালেট বের করার চেষ্টা করছিল। ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তা তার বাহুতে গুলি করে।”

ওই সময় ভিডিওতে যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তাকে ওটা বের করব না বলেছিলাম’।

ভিডিওতে পুলিশকে ওই নারীকে হাত উপরে উঠিয়ে রাখার নির্দেশ দিতে বলতে শোনা যায়। সেইসঙ্গে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজও পাওয়া যায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে একটি ‘হ্যান্ডগান’ উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

ভিডিওর এক পর্যায়ে কাঁদতে থাকা ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, “দয়া করে বলবেন না সে মারা গেছে। দয়া করে বলবেন না সে মারা গেছে।”

“আপনি তাকে চারবার গুলি করেছেন, স্যার। এটা তার প্রাপ্য ছিল না। সে ভাল মানুষ ছিল।”

যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ফার্গুসন, মিসৌরি, বাল্টিমোর ও নিউ ইয়র্কে শেতাঙ্গ পুলিশ দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের হত্যা ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যাস্টিলকে ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ৫০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২৩ জন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান।

নিহত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ১০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের সময় নিরস্ত্র ছিল। আর ৬১ শতাংশের কাছে বন্দুক ছিল।

নিউ ইয়র্কে শেতাঙ্গ পুলিশ দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের হত্যা ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।