মুহাম্মাদ আলিকে নিয়ে অজানা কিছু তথ্য

নিজের ক্ষেত্রকে ছাপিয়ে যাওয়া কিংবদন্তি বক্সার মুহাম্মাদ আলিকে নিয়ে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য জানিয়েছেন তার আত্মজীবনী লেখক-দীর্ঘদিনের বন্ধু ডেভিস মিলার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2016, 11:45 AM
Updated : 4 June 2016, 01:20 PM

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  তিনবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ও অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী এই ক্রীড়াবিদকে নিয়ে লেখা হয়নি এমন তথ্য খুব বেশি নেই। তারপরেও অনেকের অজানা কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন মিলার।

২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় নিজের বই ‘দ্য গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম’ পাশে রেখে ছবি তোলেন মুহাম্মাদ আলি।

একাধিকবার নাম বদল

১৯৬০ এর দশকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর কেন্টাকির তরুণ ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে মুহাম্মাদ আলি নাম নেওয়ার বিষয়টি অনেকেরই জানা।

“তবে খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষই জানে যে, তার নাম প্রথমবার বদলে ক্যাসিয়াস এক্স হয়েছিল,” বলেন মিলার।

তার দেওয়া তথ্য মতে, হেভিওয়েট চ্যাম্পয়ন সানি লিসটনকে হারানোর পরদিন ১৯৬৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তার এই নাম বদল হয়। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ৬ মার্চ তিনি ঘোষণা দেন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ইলাইজা মুহাম্মাদ তাকে নতুন নাম দিয়েছেন ‘মুহাম্মাদ আলি’।

মিলার মনে করেন, বর্ণবাদবিরোধী নেতা ম্যালকম এক্সের নাম ধরেই ক্যাসিয়াস এক্স  নাম নিয়েছিলেন তিনি।

ভ্যাটিকানে বৈঠক শেষে একে অপরকে অটোগ্রাফ দেন মুহাম্মাদ আলি ও পোপ দ্বিতীয় জন পল।

সুফিবাদী

১৯৬৭ সালের ২৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর আলির শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়।

সে সময় সেনাবাহিনীতে না যাওয়ার পিছনে ধর্মীয় কারণ দেখিয়েছিলেন তিনি। তরুণ বয়সে আক্রমণাত্মক আফ্রিকান আমেরিকান ইসলামীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। তবে পরবর্তীতে মরমিবাদের দিকে ঝুঁকে যান তিনি।

২০১৫ সালের শেষদিকে প্রকাশিত ‘অ্যাপ্রোচিং আলি’র লেখক মিলার বলেন, “২০০৫ সালের দিকে আলি নিজেকে সুফি ঘোষণা করেন। ইসলামের সব ধারার মধ্যে সুফিবাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যাওয়ার কথা বলেন তিনি।”

চোটের সঙ্গে লড়াই

সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিন বছর সাত মাসের নির্বাসন থেকে আলি খেলায় ফিরেছিলেন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী জেরি কুয়ারির সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।

সে সময় সফল প্রত্যাবর্তন হয়েছিল আলির। তবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে তাকে অন্য লড়াইও করতে হয়।

মিলার বলেন, “প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য আলি মাত্র ছয় সপ্তাহ সময় পেয়েছিলেন। অনুশীলনে তার বাল্যকালের বন্ধু ও সাবেক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন জিমি এলিসের আঘাত পাঁজরের হাড় ভাঙে আলির।

“ওই ইনজুরি নিয়েও আলি লড়াইয়ের সময় পাল্টাননি। এটা করতে গেলে যদি আর কখনও লড়াইয়ে নামার সুযোগ না পান সে আশঙ্কা থেকেই লড়েন তিনি।”

ফিনিক্সে মুহাম্মাদ আলি পারকিনসন সেন্টার ও অন্যান্য চ্যারিটির জন্য তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে মুহাম্মাদ আলি ও তার স্ত্রী লোনি (ছবিতে ডানে)।

পারকিনসনে যোগাযোগের নতুন কায়দা

১৯৮৪ সালে ৪২ বছর বয়সে আলির পারকিনসন রোগ ধরা পড়ার পর অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি।

“তিনি হাত ও আঙুল, মুখের ভাব, চোখের ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন।”

এ সময় তিনি বুড়ো আঙুল দিয়ে শব্দ করে দর্শনার্থীদের চমকে দেওয়ার পাশাপাশি হাত মেলানোর সময় সুড়সুড়ি দেওয়া ছাড়াও প্রায় সবাইকে খ্যাপাতেন বলে জানান মিলার।

“হাঁটতে পারলেও প্রায়ই তিনি হুইলচেয়ারে বা ইজিচেয়ারে বসে থাকতেন।”

জার্মানির হামবুর্গে এক অনুষ্ঠানে জাদু দেখাচ্ছেন মুহাম্মাদ আলি।

জাদুকর

“প্রজাপতির মতো ‘উড়ে চলা’ এবং মৌমাছির মতো ‘হুল’ থাকলেও তার চোখ যা দেখে না তাতে তার হাত আঘাত করতে পারে না।”

এই পঙক্তিগুলোর মতো আলির আরও কিছু চমকপ্রদ কৌশল ছিল।

মিলার বলেছেন, “পারকিনসনসের বছরগুলোতে ভেল্কিবাজি (হাতের কৌশল) দেখিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দিয়েছেন আলি, যা কিছুদিন আগ পর্যন্তও তিনি করেছেন।”