ফিলিপিন্সে ভোট শুরু, কট্টর ডানদের জয়ের সম্ভাবনা

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। সোমবার সকাল থেকে দেশটির জনগণ পরিবারসহ দলবেঁধে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2016, 08:32 AM
Updated : 10 May 2016, 06:24 AM

বিবিসি ও রয়টার্স বলছে, প্রখর সূর্যালোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ভোটাররা ‘আনন্দ নিয়ে’ রায় দিচ্ছেন।

তবে কোথাও কোথাও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি একই নির্বাচনে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টসহ জাতীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

নির্বাচনী সহিংসতায় অন্ততপক্ষে ১৫ জন মারা যাওয়ার পর ভোট গ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক লাখেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্রগুলো পাহারা দিচ্ছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কট্টর ডানপন্থি প্রার্থী রড্রিগো দুয়ের্তে-ই শেষ পর্যন্ত   বিজয়ী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাদো’র ২২ বছর ধরে নির্বাচিত এই মেয়র নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপগুলোতে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।

প্রচারণায় দুয়ের্তে অর্থনীতি সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন, অসাম্য ও ভয়াবহ দুর্নীতি নির্মূলের বিষয়গুলোর পাশাপাশি চীনের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরের বিবদমান দ্বীপের মালিকানা তুলে ধরেছেন। গুরুত্ব দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বিষয়কে।

তবে ‘দণ্ডনায়ক’ খ্যাত এ প্রার্থী বেশি আলোচনায় ছিলেন প্রচারণা চলাকালে তার করা ‘সন্ত্রাসীদের জবাই করা উচিত’ ও ‘অস্ট্রেলীয় এক মিশনারি নারীকে’ হত্যা ও ধর্ষণে ‘তারই প্রথম হওয়া’ উচিত ছিলসহ নানান নেতিবাচক মন্তব্যের জন্য।

১৯৮৯ সালে দাভাদো অঞ্চলে দুয়ের্তে মেয়র থাকাকালীন সময়েই কারাগারের দাঙ্গায় জ্যাকুলিন হ্যামিলস নামে ওই অস্ট্রেলীয় মিশনারি নারী হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

পরে অবশ্য নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন দুয়ের্তে।

‘পরিবর্তন আসছে’ স্লোগানে প্রচারণায় দুয়ের্তে আরও বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে জনগণের মতামত নিয়েই দেশের সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হবেন। তার এই প্রচার তরুণদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“আমি আগেভাগেই ভোট দিতে যাবো, মেয়রের পক্ষে”, রয়টার্সকে বলেন দাভাও’র এক গৃহবধু লিয়া আলিমাসাগ। অন্য অনেক দুয়ের্তে সমর্থকের মতো লিয়া’ও পরেছেন লাল রঙের পোশাক, যাকে দুয়ের্তের নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে ধরা হচ্ছে।

একই মার্কায় ভোট দিয়েছেন ম্যানিলার ২৪ বছর বয়সী হোটেল কর্মচারী জর্দান মানালো। তিনি জানান, পরিবর্তনের জন্যই তার এই ভোট।

“আমাদের যদি চরম কোন অবস্থানে যেতে হবে, তবে কেন যাব না। আমি নতুন কাউকে চাই, যে এই অবস্থা টপকে যেতে পারবে। তিনি যদি অভিজাতদের মত দেখতে না হন, তাতেও আমার আপত্তি নেই।”

সাধারণের এই পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষাকে ‘ভুল লোকের হাতে সঠিক স্লোগান’ বলে মত প্রকাশ করেছেন দেশটির জনপ্রিয় লেখক মিগুয়েল সিজুকোর। 

গেল সপ্তাহে দেশটির স্থানীয় পত্রিকায় লেখা এক কলামে তিনি লেখেন, “দুয়ের্তের ‘পরিবর্তন আসছে’ স্লোগানটি সরকারের কর্মকাণ্ডে হতাশাগ্রস্ত দরিদ্রদের আলোড়িত করেছে; যদিও সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের মধ্যেই তার সমর্থক আছে।

“পরিরর্তন আসছেই স্লোগানটি সত্যিকার অর্থেই সঠিক বার্তা, কিন্তু এটি নিয়ে যাচ্ছে এখন ভুল বার্তাবাহক।”, বলেন তিনি।

ভোটকেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ উপস্থিতি ফিলিপিনো নাগরিকদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।

জরিপে দুয়ের্তের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্কুলশিক্ষক গ্রেস পো এবং ফিলিপাইনের প্রথম প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল রোক্সার নাতি মার রোক্সা থাকতে পারেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মার রোক্সা বর্তমান প্রেসিডেন্ট বেনিগনো একুইনো’র সমর্থিত প্রার্থী।

প্রচারণার শুরু থেকেই দুয়ের্তের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করে আসছিলেন একুইনো। তিনি উগ্রপন্থি দুয়ের্তের বিরুদ্ধে অন্যদের একজোট করতেও চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, দুয়ের্তের বিজয় দেশটিকে আবারও ‘স্বৈরশাসনের’ দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শনিবার নির্বাচনের আগে শেষদিনের প্রচার সমাবেশে একুইনো ভোটারদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “ফিলিপাইনে আবারো সন্ত্রাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা রুখতে আপনাদের সহযোগিতা দরকার; আমার একার পক্ষে এটি করা সম্ভব হবে না।”

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাকি দুই প্রার্থী হচ্ছেন- জেজেমার বিনায় ও মিরিয়াম ডিফেন্সার সান্টিয়াগো।

তবে ‘যা ইচ্ছা তা বললেও’ দুয়ের্তে যে অর্থনীতিতে ‘বিরাট কোন পরিবর্তন’ নিয়ে আসতে পারবেন না, তা বলছে ইউরেশিয়া গ্রুপের গ্লোবাল রিস্ক রিসার্চ ফার্ম।

তাদের মতে, নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, তাকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট একুইনোর দেখানো পথেই হাঁটতে হবে।

একুইনোর আমলে ফিলিপিন্সের জাতীয় প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর গড়ে ‘ছয়’ এর আশপাশে ছিল, এটি একইসময়ে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে রয়টার্স।