৯/১১ হামলার ১৪ বছর, শঙ্কা আছে আজও

আজ থেকে ১৪ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে যে দিন যে সময়টিতে আঘাত হেনেছিল দুটি বিমান, ঠিক সেই মুহূর্তটিতেই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে এ বছর আবারো পালিত হল ৯/১১ হামলার বার্ষিকী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2015, 05:45 PM
Updated : 11 Sept 2015, 05:45 PM

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ছিনতাই হওয়া দুটি যাত্রীবাহী বিমানের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় পাশাপাশি থাকা দুটি  সুউচ্চ ভবন, যা পরিচিত ছিল টুইন টাওয়ার নামে।

শুধু তাই নয়, হামলা হয়েছিল প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনেও। এছাড়া, ছিনতাই হওয়া আরো একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলে।এ হামলার মধ্য দিয়ে চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অহঙ্কার। ঝরে গিয়েছিল প্রায় ৩ হাজার প্রাণ।

ওই দিনটি স্মরণে শুক্রবার নিউ ইয়র্ক সিটির গ্রাউন্ড জিরোতে বরাবরের মতো এবারো অনুষ্ঠিত হয়েছে স্মরণসভা। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।

প্রথম বিমান হামলার সময় অনুয়ায়ী নিউ ইয়র্কের গ্রাউন্ড জিরোতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সকাল ৮ টার দিকে শুরু হয় স্মরণানুষ্ঠান। এরপর হামলার সময় অনুযায়ী নিরবতা পালন করে নিহতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।  নিহতদের স্বজনেরা  প্রিয়জনদের স্মরণ করার সময়  কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে নীরবতা পালন করে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের আরো পাঁচটি স্থানে হামলার নির্দিষ্ট সময়ে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।

ভয়াবহ ওই হামলার এতগুলো বছর পরও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের হামলা হওয়ার শঙ্কা কাটেনি।বরং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আরো হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।

৯/১১ হামলার প্রতিবাদেই জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পরও  বাস্তব পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভিন্ন।

১১ সেপ্টেম্বরের আগের সময়ের তুলনায় এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র আরো অনেক বেশি বিপদের মুখে রয়েছে।

বর্তমান সময়ে মার্কিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে ইরানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামার পরমাণু চুক্তির বিষয়টি। ৯/১১’র এ বার্ষিকীতে ইরানকে ঘিরেই আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইরানকে নিয়ে স্পষ্টতই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি। বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র হিসাবে ইরানের নাম নিয়েছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছেছেন। ওদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইসরায়েলের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখার জন্য ইরানের সঙ্গে ওবামার সমঝোতায় যাওয়াকেই বিস্ময়কর মনে করছেন জুলিয়ানি। তার মতে, এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সাম্রাজ্য গড়ারই পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে।

ফক্স নিউজ চ্যানেলের মার্কিন সাংবাদিক স্টিভ ডুসাই ইরানের সঙ্গে ওবামার এ চুক্তির কারণ, ব্যাখ্যায় বলেছেন, তার প্রেসিডেন্সির সময় ফুরিয়ে আসার এ সময়ে তিনি উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একাজ করছেন।

আর ওবামার রেখে যাওয়া এ উত্তরাধিকারই হচ্ছে, জুলিয়ানির ভাষায়, ইরানি সাম্রাজ্য।

আরেক মার্কিন সাংবাদিক এইন্সলে এয়ারহার্ট বলছেন, ২১ শতাংশ মার্কিনী ইরানের সঙ্গে চুক্তিকে সমর্থন করে। আর বেশির ভাগ মার্কিনীই তা করে না।

জুলিয়ানি বলছেন, ইরান ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে থাকলে গড়ে উঠতে থাকবে শিয়া পারস্য সাম্রাজ্য। তারওপর আছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা।

এর মানে, বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা এবং আগের চেয়ে আরো বেশি চতুর শত্রুদের হুমকির মুখে আছে। এই শত্রুরা তথাকথিত একক হামলার নামে হামলা চালাতে ইচ্ছুক হলেও আসলে তারা আদৌ একক হামলা চালায় না।