কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর জনসম্মুখে প্রথম অনুষ্ঠানে ট্রাম্প

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর জনসম্মুখে প্রথম অনুষ্ঠানে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 06:19 AM
Updated : 11 Oct 2020, 06:27 AM

শনিবার হোয়াইট হাউসের একটি বারান্দা থেকে নিচের চত্বরে সমবেত হওয়া লোকজনের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি স্বরূপে ফিরলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এই অনুষ্ঠানের সাত ঘণ্টা পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের চিকিৎসক শন কনলি জানিয়েছেন, শনিবার প্রেসিডেন্টের আরেকটি পরীক্ষা করা হয়েছে আর তাতে দেখা গেছে তিনি আর ‘অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিতে’ নেই।

ওই পরীক্ষায় ‘সক্রিয়ভাবে প্রতিলিপি তৈরি মতো ভাইরাস’ এর কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন কনলি।

কনলির বিবৃতির মাধ্যমে পরীক্ষায় ট্রাম্পের করোনাভাইরাস নেগেটিভ এসেছে এটি বোঝানো হয়েছে কিনা, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।

এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭৭ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ট্রাম্প ও তার প্রশাসন যেভাবে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলার চেষ্টা করেছেন এবং হোয়াইট হাউসে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় বিষয়ে শিথিল আচরণ করেছেন, তা নিয়ে তারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রেসিডেন্ট নিজে ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পসহ তার ১১ জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

শনিবার বিকালে হোয়াইট হাউসের একটি বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে ও মাস্ক না পরে জনসম্মুখে কথা বলেন ট্রাম্প। অত্যান্ত সংক্রামক রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে এটি জনসম্মুখে তার প্রথম অনুষ্ঠান।

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ২ অক্টোবর তাকে হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখান থেকে সোমবার তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন।

হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশিরভাগ সমর্থকই ছিল কৃষ্ণকায় ও লাতিনো। তাদের অধিকাংশই মাস্ক পরা ছিলেন কিন্তু সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলেননি।

আসন্ন ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে পাশ করাতে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত এসব সমর্থকের প্রতি আহ্বান জানান ট্রাম্প।

 

“আমি খুব ভালো বোধ করছি,” উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন ট্রাম্প।

এ সময় তিনি কথা বলেন দৃঢ়ভাবে আর সম্প্রতি সাক্ষাৎকারগুলোতে তাকে যেমন দুর্বল গলায় কথা বলতে দেখা গেছে তার কোনো লক্ষণ এদিন ছিল না। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত প্রচারণামূলক বক্তব্য রাখেন তিনি।

ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণ করে তারা ‘সমাজতান্ত্রিক’ আর এমনকী ‘কমিউনিস্ট’ এজেন্ডা অনুসরণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করার নিজের কৃতিত্ব তুলে ধরেন তিনি। অপরদিকে তার সমর্থকরা পতাকা নাড়িয়ে ‘আমরা তোমাকে ভালোবাসি’ বলে শ্লোগান দেন।

এ সময় ট্রাম্পের ডান হাতে দেহের রঙের সঙ্গে মিলানো রঙের একটি ব্যান্ডজ দেখা যায়।

শনিবার থেকে ট্রাম্প জনসম্মুখে উপস্থিত হতে পারবেন বলে তার চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলেও অন্যান্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এটি তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. স্যান্ডি নেলসন জানিয়েছেন, জনস্বাস্থ্য বিধি অনুসারে যাদের রোগ লক্ষণ মৃদু তাদের লক্ষণ বিবেচনায় ১০ দিন পর কোনো ওষুধ ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা জ্বরমুক্ত থাকার পর তারা ফের যোগাযোগ শুরু করার অনুমতি পেতে পারেন।

কিন্তু ট্রাম্পের মতো যাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এবং অক্সিজেন দিতে হয়েছে, স্বাস্থ্য বিধি অনুসারে তাদের ১০ দিনেরও বেশি এবং সর্বোচ্চ ২০ দিন আইসোলেশনে থাকার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, “তার এই সভাটি সময়ভিত্তিক মানদণ্ড মেনেই করা হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু এই মানদণ্ড যেসব লোককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়নি।”

সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এই প্রথম জনসম্মুখে এলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে থাকার পর ফিরে আসতে উন্মুখ হয়ে আছেন। সোমবার প্রধান ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ রাজ্য হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডা সফরের পরিকল্পনা করেছেন তিনি, এরপর মঙ্গলবার ও বুধবার যথাক্রমে পেনসিলভ্যানিয়া ও আইওয়াতে জনসভা করার পরিকল্পনা আছে তার।