৯০ দিন ধরে প্রতিদিন জিআরএস-এর ছবি তুলেছে হাবল টেলিস্কোপ, যার ফলে এই ঝড়ের অস্বাভাবিক আচরণ দেখাতে টাইম-ল্যাপস মুভি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
Published : 05 Nov 2024, 04:38 PM
দীর্ঘদিন ধরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিত বৃহস্পতির গ্রেট রেড স্পট বা জিআরএস। দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৃহত্তম এ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে ঘুরপাক এর বিশাল ঝড়টি, যার ব্যাপ্তি গোটা পৃথিবীর চেয়েও বড়।
গ্রেট রেড স্পট নিয়ে সম্প্রতি এক অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেমনটা আগে কখনো হয়নি বলে দাবি তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন, ঝড়টি কাঁপছে বা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর আকারও পরিবর্তিত হচ্ছে। ঠিক যেন ‘জেলাটিনের বাটির মতো ঝাঁকুনি দিচ্ছে’ এটি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন জিআরএস-এর ছবি তুলেছে হাবল টেলিস্কোপ, যার ফলে এই ঝড়ের অস্বাভাবিক আচরণ দেখাতে টাইম-ল্যাপস মুভি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই গ্রেট রেড স্পটটিকে এতদিন স্থির ও স্থিতিশীল বলেই ভেবেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ৯০ দিনের এক অপ্রত্যাশিত দোলন চক্রের ফলে দেখা গেছে, এর আকার-আকৃতির পরিবর্তন, প্রসারণ ও সংকোচন হচ্ছে।
“আমরা আগে থেকেই জানতাম জিআরএস-এর অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর আকারের এমন পরিবর্তন দেখতে পাব, তা আমরা আশা করিনি,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও নাসা’র ‘গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এর এমি সায়মন।
ঝড়টির এই অদ্ভুত গতিবিধির কারণ হতে পারে জিআরএস-এর উত্তর ও দক্ষিণে শক্তিশালী জেট স্ট্রিম, যা বাধার মতো কাজ করে ও ঝড়কে এর নিজের জায়গায় আটকে রাখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র অধ্যাপক মাইক ওয়াংয়ের মতে, জিআরএস’কে চেপে ধরতে পারে এসব জেট স্ট্রিম, যার ফলে এটি একবার ফুলে উঠবে ও আবার সংকুচিত হবে। আর এ বিষয়টিই ঝড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ যোগ করার মাধ্যমে এর আকারকে প্রভাবিত করে চলেছে।
হাবল টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে আরও জানা গেছে, জিআরএস-এর কোর’টি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
গবেষকদের অনুমান, সংকুচিত হতে হতে জিআরএস অবশেষে আরও কমপ্যাক্ট আকারে স্থিতিশীল হতে পারে। তবে আপাতত রহস্য হিসাবে রয়ে গেছে জিআরএস-এর এসব পরিবর্তন। এমনকি এই ৯০ দিনের দোলন চক্রের কারণও বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা।
তা সত্ত্বেও, দানব আকৃতির এই ঝড় সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের নতুন ধারণা দিয়েছে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার। যার ফলে, কেবল বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলই নয়, বরং সৌরজগতের বাইরে থাকা বিভিন্ন গ্রহে এমন বিশাল ঝড় কীভাবে আচরণ করে তাও বুঝতে সহায়তা করেছে বিজ্ঞানীদের।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নাল’-এ। এ ছাড়া, ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিস ডিভিশন ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস’-এর ৫৬তম বার্ষিক সভায় এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে গবেষণা দলটি।
গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে উচ্চ-রেজোলিউশনের বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে জিআরএস-এর এই দোলনের কারণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।