জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক ফেলিক্স মেন্ডেলসোহনও আল্পসে তার গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণের সময় ওই ভয়ানক আবহাওয়া সম্পর্কে লিখেছিলেন।
Published : 08 Jan 2025, 04:19 PM
অবশেষে ১৮৩১ সালে ঘটা এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাত সম্পর্কে শতাব্দী প্রাচীন রহস্যের সমাধান করেছেন গবেষকরা, যা গোটা বিশ্বে তৈরি করেছিল বিশৃঙ্খলা।
এখন পর্যন্ত কারো জানা ছিল না, কোন আগ্নেয়গিরি এ ঘটনার জন্য দায়ী। ওই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশ্বে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা আবহাওয়া, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত ঘটেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান ও সমন্বিত গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া গেছে এর জন্য দায়ী কে। গবেষকরা বলছেন, রাশিয়ার প্রত্যন্ত কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সিমুশি’র দ্বীপের জাভারিৎস্কি আগ্নেয়গিরি ছিল এর কারণ।
১৮৩১ সালের এই শক্তিশালী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ সালফিউরাস গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এসব গ্যাস সূর্যের আলোকে প্রতিফলন করে মহাশূন্যে ফিরিয়ে দেয়, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যায় প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রার এই আকস্মিক কমে যাওয়া বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলেছিল পৃথিবীতে, এর ফলে গোটা বিশ্ব থেকেই মিলেছে খারাপ আবহাওয়ার খবর।
জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক ফেলিক্স মেন্ডেলসোহনও আল্পসে তার গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণের সময় ওই ভয়ানক আবহাওয়া সম্পর্কে লিখেছিলেন। বৃষ্টি, ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ও পাহাড়ের তুষারপাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, এ যেন এক শীতকাল!
বছরের পর বছর ধরে এই ‘রহস্যময় অগ্ন্যুৎপাত’ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানলেও এর পেছনে দায়ী আগ্নেয়গিরিটি শনাক্ত করতে পারেননি তারা।
সম্প্রতি এর রহস্য উন্মোচন করেছেন ‘সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ড. উইল হাচিসনের নেতৃত্বে গবেষকদের একটি দল। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ।
বরফের কোর নমুনা বিশ্লেষণ করে এ কাজে সাফল্য অর্জন করেছে গবেষণা দলটি। এসব নমুনা এসেছে মেরু অঞ্চল থেকে, যা অতীতের অগ্ন্যুৎপাত থেকে আগ্নেয়গিরির ছোট ছোট ছাইয়ের কণা ধারণ করেছে নিজের মধ্যে।
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৮৩১ সালের অগ্ন্যুৎপাতের ছাইয়ের সঙ্গে জাভারিৎস্কি আগ্নেয়গিরিতে পাওয়া ভষ্মের মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
এসব ছাইয়ের কণা আকারে বিস্ময়করভাবে ছোট ছিল, যা মানুষের চুলের ব্যাসের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ। তবে ‘নিখুঁত আঙুলের ছাপের মতো’ কাজ করেছে এরা।
“এটি আর্কিমিডিসের ইউরেকা মুহূর্তের মতো ছিল,” বলেছেন গবেষক হাচিসন।
“দুটো আগ্নেয়গিরির ছাই মিলে যাওয়ার ফলে বুঝতে পারলাম আমরা সঠিক আগ্নেয়গিরির খোঁজ পেয়েছি। এরপর আমরা অগ্ন্যুৎপাতের আকার ও সময়ের রেকর্ড পর্যালোচনা করে আমাদের ফলাফল নিশ্চিত করি।”
রাশিয়ার প্রত্যন্ত কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সিমুশি’র দ্বীপের জাভারিৎস্কি আগ্নেয়গিরি এমন এক অঞ্চল, যার আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এসব দ্বীপ বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করে জাপান।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় সিমুশি দ্বীপকে পারমাণবিক সাবমেরিনের গোপন ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করেছিল সোভিয়েতরা, যা এ অঞ্চলে যোগ করেছে কৌতূহলী এক ঐতিহাসিক মোড়।
“আগ্নেয়গিরিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও এর অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশ্ব জুড়েই প্রভাব পড়েছে। আর এসব ঘটনা বোঝা, জলবায়ু ও সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে এমন ভবিষ্যতের অগ্ন্যুৎপাতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে আমাদের,” বলেছেন হাচিসন।