সোনার মতোই নীলকান্তমণি পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। পাশাপাশি সোনার প্যান ব্যবহার করে হালকা নদীর পলল থেকে এটিকে আলাদা করা যায়।
Published : 31 Jul 2024, 05:08 PM
নীলকান্তমনি বা নীলা মূলত নীল রঙের এক ধরনের বহুমূল্যবান রত্ন পাথর। কিছু আগ্নেয়গিরি থেকে তৈরি হয়ে থাকে নীলকান্তমনি। কিন্তু কীভাবে আগ্নেয়গিরি নীলকান্তমণি তৈরি করে?
সম্প্রতি আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে নীল রঙের সুন্দর নীলকান্তমণি কীভাবে তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে গবেষণা করছেন ‘হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা।
মূল্যবান হলেও নীলকান্তমণি আসলে ‘দূষিত’ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড দিয়ে গঠিত, যা ‘কোরান্ডাম’ নামে পরিচিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এসব রত্ন বেশিরভাগই সিলিকন আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন শিলাতে সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, নীলকান্তমণি পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরে তৈরি হয় ও ম্যাগমার সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে।
‘হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি’র ভূ-বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভূ-রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, জার্মানির আইফেল অঞ্চলে মিলিমিটার আকারের বিভিন্ন নীলকান্তমণি তৈরির বিষয়টি আসলে আগ্নেয়গিরির কাযকলাপের সঙ্গে যুক্ত।
মধ্য ইউরোপের আগ্নেয়গিরি অঞ্চল আইফেল, যেখানে পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে ম্যাগমা প্রায় সাত লাখ বছর ধরে ভূত্বকে চাপ দিচ্ছে।
এ ম্যাগমায় সিলিকন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কম হলেও সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি। আর এটি এমন একটি গঠন, যার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নীলকান্তমণি তৈরির যোগসূত্র রয়েছে। তবে আগ্নেয়গিরিতে নীলকান্তমণি পাওয়ার বিষয়টি এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে অস্পষ্ট ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার ‘কার্টিন ইউনিভার্সিটি’র আইসোটোপ ভূতত্ত্ব ও শিলাত্বত্ত গবেষক এবং ‘হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক অধ্যাপক ড. অ্যাক্সেল স্মিট বলেছেন, আমাদের ধারণা ছিল, পৃথিবীর ভূত্বকের উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের ফলে কাদামাটির পলল থেকে নীলকান্তমণি তৈরি হয়েছে।
যেখানে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে আসা ম্যাগমা এই রত্নের জন্য একটি ‘লিফট’ হিসাবে কাজ করে ও এইসব স্ফটিককে পৃথিবীর পৃষ্ঠে নিয়ে আসে। এ ধারণাটি যাচাই করার জন্য গবেষকরা আইফেল থেকে ২২৩ টি নীলকান্তমণি এনে পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে কয়েকটি নীলকান্তমণির ছোট স্ফটিক কেবল স্থানীয় খনি থেকে আগ্নেয়গিরির শিলার নমুনায় পাওয়া গেলেও বেশিরভাগই নদীর পলি থেকে এসেছে।
সোনার মতোই নীলকান্তমণি পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। পাশাপাশি সোনার প্যান ব্যবহার করে হালকা নদীর পলল থেকে এটিকে আলাদা করা যায়।
নীলকান্তমণির মধ্যে খনিজ অন্তর্ভুক্তি ও অক্সিজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করতে ইউরেনিয়াম-লেড ডেটিং পদ্ধতি ও ‘সেকেন্ডারি আয়ন ম্যাস স্পেকট্রোমিটার’ ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
অক্সিজেন-১৬ ও অক্সিজেন-১৮, অক্সিজেনের এই দুটি আইসোটোপ নীলকান্তমণির জন্মস্থানের প্রশ্নে আঙুলের ছাপের মতো কাজ করে। গভীর ভূত্বক শিলায় অক্সিজেন-১৮ আইসোটপের পরিমান বেশি থাকে।
গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, আইফেল অঞ্চলের বিভিন্ন নীলকান্তমণি আগ্নেয়গিরি যখন জীবন্ত ছিল, সে সময়ে গঠিত হয়েছে।
এ গবেষণার পরিচালক ও ‘হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি’র স্নাতকোত্তর গবেষক সেবাস্তিয়ান শ্মিড বলেন, ম্যাগম্যাটিক অর্থাৎ পৃথিবীর অভ্যন্তরে গলিত শিলা উপাদান ও মেটাফরিক বা রূপান্তরিত শিলা বিশেষ করে ভাঁজ বা আগ্নেয় শিলা উভয় প্রক্রিয়ারই ভূমিকা ছিল আইফেল অঞ্চলের নীলকান্তমণির স্ফটিক তৈরিতে। এর মানে হচ্ছে, মূল শিলায় তাপমাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তন নীলকান্তমণি গঠনে অবদান রেখেছে।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘কন্ট্রিবিউশনস টু মিনারোলজি অ্যান্ড পেট্রোলজি’-তে।