অ্যান্ড্রোমিডা’র ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থাকা গ্যাস ও ধুলাবালি কী ধরনের আচরণ করে থাকে, তা বুঝতে গবেষকরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন।
Published : 12 May 2024, 03:25 PM
সম্প্রতি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলেছে নাসা। আর সেখান থেকেই মিলেছে এর রহস্য সমাধানের সূত্র।
নাসার ‘স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ’-এর মাধ্যমে তোলা অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের আকর্ষণীয় সব ছবি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে। এতে দেখা যায়, কীভাবে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডার কেন্দ্রে থাকা সুবিশাল ব্ল্যাক হোলটি এর আশপাশের ধূলিকণা ও গ্যাস গিলে খাচ্ছে।
এইসব অনুসন্ধান বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে, ঠিক কী কারণে মহাবিশ্বের কিছু সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল এর আশপাশের ধূলিকণা ও উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে গিলে খাওয়ার পরও এরকম শান্ত থাকে।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন অশান্ত ব্ল্যাক হোলও রয়েছে, যেগুলো এর আশপাশের ধূলিকণা ও উপাদান গিলে খাওয়ার সময় উৎপন্ন হওয়া তীব্র তাপের কারণে এর ছায়াপথকে আলোকিত করে। সে তুলনায়, অ্যান্ড্রোমিডা’র ব্ল্যাক হোলটি একেবারে শান্ত এক ভক্ষক।
এর আলোও প্রায় একই অবস্থায় থাকে, যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, ব্ল্যাক হোলটিতে ধূলিকণা ও গ্যাসের প্রবাহ স্থির ও নিয়ন্ত্রিত।
ব্লাক হোলটির ধীর বা মৃদুভাবে এর আশপাশের ধূলিকণা ও উপাদান গিলে খাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটা ড্রেনের নিচের আলতো পানি প্রবাহের মতো, যেখানে অন্যান্য মহাজাগতিক বিশাল বস্তুর মতো হিংস্র গতিবিধিও দেখা যায় না।
অ্যান্ড্রোমিডা’র ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থাকা গ্যাস ও ধুলাবালি কী ধরনের আচরণ করে থাকে, তা বুঝতে গবেষকরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন।
এতে তারা দেখতে পান, ব্ল্যাক হোলের কাছে গরম গ্যাসের একটি ছোট ডিস্ক তৈরি হয়, যা ক্রমাগত এর আশপাশের ধূলিকণা ও উপাদান গিলে খেতে সাহায্য করে।
আর ডিস্কটি গ্যাস ও ধূলিকণার স্রোত দিয়ে নিজে নিজেই পূরণ হতে থাকে, যা এর আকার ও প্রবাহের হার ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক।
তবে, এইসব স্রোত আকারে খুব বড় বা দ্রুতগতির হয়ে থাকলে, সেগুলো একত্রে জমে যাবে ও অপ্রত্যাশিতভাবে ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ঢুকে যাবে, যার ফলে আলোর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
এইসব সিমুলেশনের ফলাফল স্পিটজার ও হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মূল তথ্যের সঙ্গে তুলনা করেছে গবেষণা দলটি। এমনকি তারা ব্ল্যাক হোলের আশপাশে সর্পিল বা আঁকাবাকা অবস্থায় থাকা ধূলিকণাও পর্যবেক্ষণ করেছেন, যা এর আগে শনাক্ত হয়েছিল স্পিটজার টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এতে এমন একটি প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়, যা সিমুলেশন সমর্থন করে ব্ল্যাক হোলটির আশপাশের উপাদান গিলে খাচ্ছে।
গবেষকদের পর্যবেক্ষণ করা তথ্য ও এইসব সিমুলেশনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্ল্যাক হোলের এই ‘স্টেডি ফিডিং’ তত্ত্বটি।
গবেষণাটিতে শুধু নতুন প্রযুক্তি ও তত্ত্বের সঙ্গে পুরোনো ডেটা নতুন করে বিবেচনা করার গুরুত্বই ফুটে ওঠেনি, বরং বিভিন্ন ছায়াপথ ও এদের কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোল কীভাবে মিথষ্ক্রিয়া ঘটায়, সে সম্পর্কেও প্রচলিত ধারণারও উন্নতি ঘটিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এদিকে, এমন আর্কাইভ করা ডেটার গুরুত্ব তুলে ধরে এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত জোতির্বদার্থবিদ অ্যালমুডেনা প্রিয়েটো বলেছেন, তার সংরক্ষিত ডেটা এত বছর পরও ছায়াপথের গতিবিধি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের তথ্য দিয়ে চলেছে।
‘স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ’ চালু হয়েছে ২০০৩ সালে, যা পরিচালনা করে আসছে নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি’। এটি ইনফ্রারেড আলোর মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিভিন্ন এমন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, যা খালি চোখে দেখা যায় না।